শেখ হাসিনা
,

স্বামীকে ‘মৃত’ দেখিয়ে শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা, থানায় হাজির হয়ে জানালেন আসল ঘটনা

প্রতারণা করে অসৎ উদ্দেশ্যে মামলা দায়ের, স্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি

ঢাকার আশুলিয়ায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে, যেখানে এক নারী তাঁর স্বামীকে ‘মৃত’ দেখিয়ে মামলা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মামলা করার তিন মাস পর ওই ‘মৃত’ স্বামী থানায় এসে উপস্থিত হন এবং নিজেকে জীবিত হিসেবে দাবি করেন।

এই ঘটনায় জড়িত ওই নারীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে পুলিশ।

মামলা এবং বিবরণ

গত ২৪ অক্টোবর কুলসুম বেগম (২১) নামে এক নারী ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাঁর স্বামীকে হত্যার অভিযোগ এনে মামলা করেন।

মামলার অভিযোগে কুলসুম দাবি করেন, তাঁর স্বামী মো. আল আমিন মিয়া (৩৪) গত ৫ আগস্ট ঢাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, আন্দোলন চলাকালে বিকেল চারটার দিকে আশুলিয়ার বাইপাইলে বিজয় মিছিলের সময় আল আমিন আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন।

মামলায় প্রধান আসামি হিসেবে শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগের ভিত্তিতে, আদালত থেকে মামলা ৮ নভেম্বর ঢাকার আশুলিয়া থানায় এজাহার হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

কুলসুমের কল্পিত ঘটনার বিবরণ

মামলার এজাহারে কুলসুম বেগম দাবি করেন যে, অনেক খোঁজাখুঁজি করেও স্বামীর সন্ধান পাননি তিনি।

পরবর্তীতে, তিনি জানতে পারেন যে আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালে বিপুল সংখ্যক অজ্ঞাতনামা লাশ দাফন করা হয়েছে।

কুলসুম দাবি করেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাগজপত্র, ছবি এবং ভিডিও দেখে তিনি তাঁর স্বামীর লাশ শনাক্ত করেছেন।

আল আমিনের অপ্রত্যাশিত ফিরে আসা এবং অভিযোগের প্রেক্ষাপট

কুলসুম বেগমের দায়ের করা মামলার প্রেক্ষাপট এক নতুন মোড় নেয়, যখন আল আমিন নিজে থানায় এসে জীবিত হিসেবে দাবি করেন।

মামলা দায়েরের প্রায় দুই সপ্তাহ পর তিনি জানতে পারেন যে তাঁকে মৃত দেখিয়ে স্ত্রী একটি মামলা করেছেন।

আল আমিন তখন মৌলভীবাজারের জুড়িতে কাজ করছিলেন এবং নিজের নামে মামলা করার কথা জানতে পেরে অবাক হন।

তিনি জানান, মামলা থেকে আসামিদের নাম প্রত্যাহার করার কথা বলে তাঁর স্ত্রী নাকি বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকাও নিচ্ছেন।

আল আমিন সিলেট মহানগর পুলিশের দক্ষিণ সুরমা থানায় গিয়ে ঘটনাটি জানান এবং স্থানীয় পুলিশ বিষয়টি আশুলিয়া থানাকে অবহিত করে।

পুলিশের প্রতিক্রিয়া এবং আইনি প্রক্রিয়া

আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক মো. কামাল হোসেন বলেন, “বাদী কুলসুম মিথ্যা মামলা করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

তিনি আরও জানান, আল আমিনকে সিলেট থেকে আশুলিয়া থানায় আনা হয়েছে এবং তাঁকে আদালতে নেওয়া হবে।

আদালতে তিনি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দেবেন, যেখানে তিনি তাঁর জীবিত থাকার প্রমাণ দেবেন।

আল আমিন বলেন, “আমি জীবিত আছি। আমার স্ত্রী মিথ্যা মামলা করেছে। আমি এখনো মারা যাইনি।”

তাঁর অভিযোগ, “ওকে কেউ হয়তো চক্রান্ত করে মামলা দেওয়াইছে, অথবা এর পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে।”

আল আমিনের দাবি ও পুলিশি তদন্ত

আল আমিন দাবি করেন, ৫ আগস্টের আন্দোলনের দিন তিনি সিলেটে ছিলেন এবং স্ত্রীসহ তিনি জুড়িতে অবস্থান করছিলেন।

মামলার বিবরণ অনুযায়ী, তাঁর গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটে হলেও সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় তিনি দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন।

আল আমিন জানান, “৫ আগস্ট আমি সিলেটে ছিলাম। এরপর স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া হয়, এবং সে মানিকগঞ্জে চলে যায়।”

তিনি আরও জানান যে, মামলার খবর পাওয়ার পর তিনি দক্ষিণ সুরমা থানায় গিয়ে জিডি করেছেন।

আইনি প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপ

আশুলিয়া থানার তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, আল আমিনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মামলাটি পুনরায় তদন্ত করা হবে।

মামলার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আদালতে আল আমিনের জবানবন্দি নেওয়া হবে।

আল আমিনের বক্তব্যের ভিত্তিতে কুলসুম বেগমের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনা হতে পারে।

পরিবারের প্রতিক্রিয়া

আল আমিনের ভাই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমার ভাইকে মৃত দেখিয়ে কুলসুম মামলা করেছে। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।”

তিনি আরও জানান, পরিবার বিষয়টি পুলিশকে জানিয়েছে এবং তাঁরা আইনগত পদক্ষেপের অপেক্ষায় আছেন।

ঘটনা সম্পর্কে কুলসুমের মন্তব্য পাওয়া যায়নি

এই বিষয়টি নিয়ে কুলসুম বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

এতে করে তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি এবং তাঁর পক্ষ থেকে মামলা সম্পর্কিত কোনো মন্তব্য করা সম্ভব হয়নি।

বাংলাদেশে ‘মৃত’ দেখিয়ে মামলা করার অপব্যবহারের আশঙ্কা

এই ঘটনা বাংলাদেশে মিথ্যা মামলা এবং ‘মৃত’ দেখিয়ে প্রতারণা করার আশঙ্কা উস্কে দিয়েছে।

আইনজীবীরা বলছেন, অনেক সময় ব্যক্তিগত স্বার্থে মিথ্যা মামলা করা হয়, যা দেশের বিচার ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

বাংলাদেশের আইন বিশেষজ্ঞরা এই ধরনের ঘটনা রোধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছেন।

অবশ্য, বর্তমান পরিস্থিতিতে কুলসুম বেগমের বিরুদ্ধে আনীত প্রতারণার অভিযোগে যথাযথ তদন্ত পরিচালনা করা হবে।

আরও পড়তে পারেন