,

বিএনপির দখলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ: নূর হোসেন দিবসে আওয়ামী লীগ মাঠে নামতে ব্যর্থ

রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে গুলিস্তান ও আশপাশে ক্ষমতাসীন ও বিরোধী পক্ষের মুখোমুখি অবস্থান

ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে রবিবার সকালে দেখা যায় বিএনপি ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের শক্তিশালী উপস্থিতি। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পর মাত্র তিন মাস আগে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ নূর হোসেন দিবসে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিলেও মাঠে নামতে ব্যর্থ হয়েছে।

অল্প কিছু আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে জড়ো হলেও তাদের কয়েকজনকে বিএনপি নেতাকর্মীদের হাতে মারধরের শিকার হতে দেখা যায়। বেশ কয়েকজনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করেও নিয়ে যায়।

এদিকে, রোববার সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও গুলিস্তান এলাকায় বিএনপি ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা হকিস্টিক, ক্রিকেট খেলার স্টাম্প এবং লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে মিছিল করতে দেখা যায়। আওয়ামী লীগের ডাকা কর্মসূচি প্রতিহতের ঘোষণা দেয়ার পর থেকে বিরোধী পক্ষের কর্মীরা এসব এলাকায় নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে থাকে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আহ্বান ও প্রতিরোধের ঘোষণা

আওয়ামী লীগ শনিবার তাদের ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে দলীয় নেতাকর্মীদের নূর হোসেন দিবসের কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার আহ্বান জানায়। এর পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি ও তাদের অঙ্গ সংগঠনসহ বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠন কর্মসূচি প্রতিহতের ঘোষণা দেয়।

শনিবার রাত থেকেই বিএনপি এবং বাম সংগঠনগুলো গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেয়। রবিবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের উত্তর গেটে গণজমায়েত করে ছাত্রদের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন।

“আওয়ামী লীগের বিচার নিশ্চিত না হলে তাদের প্রকাশ্যে আসার অধিকার নেই”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগকে গণহত্যার দায়ে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। তিনি বলেন, “গণহত্যার সাথে জড়িতরা কোনোভাবেই জনসমক্ষে আসতে পারে না।” সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দও আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।

এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থেকে আওয়ামী লীগ বিরোধী শ্লোগান দিতে থাকে।

দুপুরের দিকে বিএনপি কর্মীদের অবস্থান জোরদার

দুপুরের পর শাহবাগ, রমনা থানা সহ বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপির কর্মীরা বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আসতে শুরু করে। তারা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দেয় এবং কর্মসূচিতে অংশ নেয়। কয়েকজনকে যুবদল ও বিএনপি লেখা ব্যান্ড বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়।

একজন বিএনপি কর্মী বলেন, “জুলাই মাসে আওয়ামী লীগের হাতে নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছে, কিন্তু তাদের কোনো অনুশোচনা নেই।”

“যদি সাহস থাকে, আওয়ামী লীগ মাঠে আসুক”

বিএনপির বিপ্লবী নামের এক নেত্রী স্টাম্প হাতে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের সামনে স্লোগান দেন। তিনি বলেন, “আমরা আওয়ামী লীগকে উপযুক্ত ‘আপ্যায়ন’ করব, যদি তারা সাহস নিয়ে আসে।”

বিকেলের দিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে অবস্থান নেয় এবং স্লোগান দিতে থাকে।

আওয়ামী লীগ সন্দেহে মারধরের শিকার কয়েকজন

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে বিএনপি ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের কর্মীরা অবস্থান নেয়ার পর সন্দেহভাজন আওয়ামী লীগ কর্মীদের মারধর করতে দেখা যায়। দুপুর আড়াইটার দিকে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগ কর্মী সন্দেহে মারধর করা হয়, পরে তাকে পুলিশ উদ্ধার করে।

একজন যুব মহিলা লীগ কর্মীও একই ভাবে বিএনপি কর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত হন এবং পরবর্তীতে তাকে পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।

গণমাধ্যম কর্মী সন্দেহে হয়রানি

বিকাল তিনটার দিকে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের গেটে একজন গণমাধ্যম কর্মীকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়। তবে তার পরিচয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছু জানা যায়নি। উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা তাকে নিরাপদে সরিয়ে নেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি

এই কর্মসূচিকে ঘিরে এলাকায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে সেনাবাহিনীর এপিসি গাড়ি ও তল্লাশি চৌকি দেখা যায়। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম এবং এর আশেপাশে সেনাবাহিনীর টহল লক্ষ্য করা যায়।

বিক্ষোভে আহত ও নিহতদের পরিবারের অংশগ্রহণ

বিকেলে ছাত্র সংগঠনের কর্মসূচিতে বিগত আন্দোলনে আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। বক্তারা আওয়ামী লীগকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান।

একজন ছাত্রনেতা বলেন, “১৬ বছরের অত্যাচারের পর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ যদি ফিরে আসতে চায় তবে সেটি বিচার নিশ্চিতের জন্য হতে হবে।”

আরও পড়তে পারেন