সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের নির্বাহী ক্ষমতায় অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য বিশেষ বিধান
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে স্থিতিশীলতা আনতে এবং সংবিধানিক সঙ্কট মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা নিয়ে একটি নতুন অধ্যাদেশ চূড়ান্ত করেছে বর্তমান সরকার।
১৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করা এই অধ্যাদেশের খসড়াটি শীঘ্রই আনুষ্ঠানিকভাবে জারি করা হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ চলমান থাকবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ গঠিত হওয়ার পর নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়া পর্যন্ত। এই সময়কালে সরকারের যেকোনো পদক্ষেপের বৈধতা নিয়ে আদালতে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না বা মামলা করা যাবে না বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এই অধ্যাদেশের উদ্দেশ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের বৈধতা নিশ্চিত করা।
ক্ষমতার পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন
গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার।
জনগণ ও ছাত্র সমাজের অভ্যুত্থানের মুখে বিদ্যমান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি।
এরপরই, দেশের রাজনৈতিক সঙ্কটের মুখে আপিল বিভাগের মতামত গ্রহণ করে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়।
সেদিনই প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টারা শপথ গ্রহণ করেন।
নতুন অধ্যাদেশের বৈশিষ্ট্য এবং ক্ষমতা প্রয়োগের বিশেষ শর্তাবলী
সরকারি সূত্র মতে, এই অন্তর্বর্তী সরকার দেশের নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। তবে কোনো পরিস্থিতিতেই এই সরকারের গঠন, এর প্রধান উপদেষ্টা কিংবা অন্য কোনো উপদেষ্টার পদক্ষেপ আদালতে প্রশ্নবিদ্ধ হবে না।
খসড়া অনুযায়ী, প্রধান উপদেষ্টা ঠিক করবেন কতজন উপদেষ্টা এই সরকারের দায়িত্ব পালন করবেন। তবে, সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা এই অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়নি।
অধ্যাদেশের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি একজন স্বনামধন্য এবং গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেবেন এবং প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শ অনুযায়ী বাকি উপদেষ্টাদের নিয়োগ দেওয়া হবে।
এদিকে, একজন উপদেষ্টা নির্বাচনের জন্য কোনো পদে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন না বা জনপ্রতিনিধি হওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ প্রকাশ করতে পারবেন না।
নির্বাচন কমিশনের সহায়তায় অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা
অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব হলো, নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করা যাতে সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়।
অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, সংবিধান বা অন্যান্য আইনের বিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমে সহযোগিতা করবে এবং প্রয়োজনে নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করবে।
আদালতে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই
এই অধ্যাদেশের খসড়ায় একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হলো, অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ড ও সিদ্ধান্ত নিয়ে আদালতে কোনো ধরনের প্রশ্ন তোলা যাবে না।
যেকোনো সিদ্ধান্ত, অধ্যাদেশ, আদেশ, বা গৃহীত ব্যবস্থা আইনি বলে গণ্য হবে এবং সুপ্রিম কোর্ট কিংবা অন্য কোনো আদালত এই বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তুলতে পারবে না।
এই বিধানটি অন্তর্বর্তী সরকারের নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের সময়সীমায় কার্যকর থাকবে এবং নতুন প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার পর তা বাতিল হবে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও উপদেষ্টা পরিষদ
বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তাঁর নেতৃত্বে ২০ জন উপদেষ্টার একটি পরিষদ দেশের সাময়িক নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করছে।
সকল উপদেষ্টা তাঁদের পদে থাকার সময় নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার শর্তে রাজি হয়েছেন।
অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ্যতার মানদণ্ড
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা এবং অন্যান্য উপদেষ্টাদের যোগ্য হতে হবে। তাঁরা কোনো সংসদীয় কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
এই শর্ত অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা এবং পক্ষপাতহীনতার বিষয়টিকে আরও জোরালো করেছে।
নির্বাচনী প্রস্তুতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের করণীয়
সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং অন্তর্বর্তী সরকার কমিশনকে পূর্ণ সহায়তা করবে বলে খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়া, নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলকভাবে পরিচালিত হবে কিনা, তা নিশ্চিত করতেই এই সহায়তা প্রদান করা হবে।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং অধ্যাদেশের গুরুত্ব
রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনার জন্য এই অধ্যাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
নির্বাহী ক্ষমতার প্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো রকম আইনি জটিলতা এড়ানোর জন্যই এই অধ্যাদেশ প্রণয়ন করা হয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, অধ্যাদেশটি জারি হলে দেশের বর্তমান সাংবিধানিক সঙ্কট মোকাবিলায় অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
সংবিধান ও আইনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ উদ্যোগ
অধ্যাদেশটি সংবিধানের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে আইন ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হচ্ছে।
এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে এবং দেশের সাংবিধানিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ ও ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়ে যে অধ্যাদেশের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে, তা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
নির্বাচনকালীন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রভাবী ভূমিকা পালন গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা।