সিলেটে নিখোঁজের এক সপ্তাহ পর শিশু মুনতাহার লাশ উদ্ধার, সন্দেহভাজন মা-মেয়ে আটক

মুনতাহার লাশ ডোবা থেকে তুলে পুকুরে ফেলতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা

সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় নিখোঁজের এক সপ্তাহ পর পাঁচ বছরের শিশু মুনতাহা আক্তারের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, শিশুটির লাশ ডোবায় কাদামাটির মধ্যে পুঁতে রাখা হয়েছিল।

ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটক হয়েছেন একজন মধ্যবয়সী নারী ও তার মেয়ে।

কানাইঘাট থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ঘটনার পর সন্দেহভাজন হিসেবে আটক তরুণীর মা ডোবা থেকে লাশ তুলে বাড়ির পাশের পুকুরে ফেলার সময় স্থানীয় লোকজনের হাতে আটক হন।

আটককৃত নারীর নাম আলিফজান (৫৫) এবং তার মেয়ে মার্জিয়া আক্তার (২৫)।

তারা কানাইঘাট সদর উপজেলার বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামে বসবাস করেন।

নিহত শিশু মুনতাহা একই গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে।

নিখোঁজ হওয়ার এক সপ্তাহ পর উদ্ধার

শিশু মুনতাহা গত ৩ নভেম্বর বিকেলে নিখোঁজ হয়।

সেদিন সকালে বাবার সঙ্গে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিলে অংশ নিয়ে দুপুরে বাড়ি ফিরেছিল মুনতাহা।

এরপর প্রতিবেশী শিশুদের সঙ্গে খেলতে বেরিয়ে বিকেল পর্যন্ত বাড়ি ফিরেনি সে।

পরিবার ও স্থানীয়রা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও শিশুটির সন্ধান পায়নি।

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পরিবারের পক্ষ থেকে শিশুটির সন্ধানদাতাকে পুরস্কার দেওয়ারও ঘোষণা দেওয়া হয়।

এদিকে, শিশুটির নিখোঁজের ঘটনায় কানাইঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়।

তবে খোঁজাখুঁজির সাত দিন পর আজ রোববার ভোরে মুনতাহার লাশ পাওয়া যায়।

ডোবা থেকে পুকুরে লাশ ফেলার চেষ্টা, হাতেনাতে আটক

কানাইঘাট থানার পুলিশ জানায়, লাশটি ডোবায় কাদামাটির মধ্যে পুঁতে রাখা ছিল।

এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে মার্জিয়া আক্তারকে পুলিশ শনিবার রাতে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

মার্জিয়া ছিলেন মুনতাহার প্রাইভেট শিক্ষিকা।

তাকে থানায় আনার পর মার্জিয়ার মা আলিফজান রাতের আঁধারে লাশটি ডোবা থেকে তুলে পুকুরে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেন।

কিন্তু স্থানীয় লোকজন বিষয়টি বুঝতে পেরে তাকে আটক করে।

এ সময় লাশটি নিজের কোলে নিয়ে পুকুরের দিকে যাচ্ছিলেন আলিফজান।

ধরা পড়ার পর তিনি লাশটি মাটিতে ফেলে দেন।

মুনতাহার শরীরে আঘাতের চিহ্ন, গলায় রশির ফাঁস

লাশ উদ্ধারের পর মুনতাহার শরীরে কাদামাটি লেগে ছিল বলে পুলিশ জানায়।

শিশুটির গলায় রশির মতো কিছু প্যাঁচানো ছিল, যা দেখে ধারণা করা হচ্ছে, শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে।

সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে শত্রুতার অভিযোগ

পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, আলিফজান ও তার মেয়ে মার্জিয়ার সঙ্গে মুনতাহার বাবার শামীম আহমদের ব্যক্তিগত বিরোধ ছিল।

কিন্তু সেই বিরোধের কারণ এখনো পরিষ্কার নয়।

কানাইঘাট থানার সহকারী পুলিশ সুপার (কানাইঘাট সার্কেল) অলক কান্তি শর্মা জানান, এ ঘটনার তদন্ত চলছে।

তবে এখন পর্যন্ত আটককৃতরা এ ঘটনায় কোনো স্বীকারোক্তি দেয়নি।

স্থানীয়দের ক্ষোভ, বাড়িতে আগুন ও ভাঙচুর

শিশুটির লাশ উদ্ধারের পর স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

ক্ষুব্ধ জনতা আলিফজানের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় এবং তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়।

পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং স্থানীয়দের শান্ত করে।

নিখোঁজের ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে মার্জিয়ার আটক

মুনতাহার নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই তার পরিবার দাবি করছিল যে এটি একটি পরিকল্পিত অপহরণ।

কানাইঘাট থানার পুলিশ শিশুটির নিখোঁজের ঘটনাকে কেন্দ্র করে তদন্ত শুরু করে।

মুনতাহার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার রাতে প্রতিবেশী মার্জিয়া আক্তারকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়।

পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে গেলে তার মা আলিফজান লাশ সরানোর উদ্যোগ নেন।

তদন্ত ও আইনগত পদক্ষেপ

সহকারী পুলিশ সুপার অলক কান্তি শর্মা জানান, আটক হওয়া আলিফজান ও মার্জিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

মার্জিয়াকে আটকের পরই তার মা আলিফজান আতঙ্কিত হয়ে ডোবা থেকে লাশ সরানোর চেষ্টা করেছিলেন।

প্রাথমিকভাবে আলিফজান জানিয়েছেন, তার ও মুনতাহার পরিবারের মধ্যে ব্যক্তিগত বিরোধ ছিল, তবে এর প্রকৃতি এখনো পরিষ্কার নয়।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কঠোরভাবে আইনের আওতায় আনা হবে।

এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, তাই তদন্ত আরও বিস্তৃত করা হচ্ছে।

শিশু নিখোঁজের ঘটনা বাড়ছে, শঙ্কিত সাধারণ মানুষ

এ ধরনের ঘটনার প্রেক্ষাপটে শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।

বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও মানবাধিকার কর্মীরা এ ধরনের ঘটনার প্রতি তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে।

শিশু নিখোঁজ ও অপহরণের ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানো এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের উদ্যোগ

পুলিশ বলছে, শিশু মুনতাহার হত্যার ঘটনা খুবই নৃশংস।

এই ঘটনার তদন্তে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এবং দ্রুত প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

পুলিশ আরও জানিয়েছে, এই ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনতে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

শিশু নিখোঁজের মতো ঘটনা রোধে এলাকার মানুষকে আরও সচেতন হতে আহ্বান জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

মুনতাহার মৃত্যুরহস্য উদঘাটনের পথে পুলিশ

মুনতাহার আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনায় পুরো এলাকা স্তম্ভিত।

নিহত শিশুটির পরিবার, প্রতিবেশী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চায় দ্রুত এই হত্যাকাণ্ডের পেছনের কারণ উদঘাটিত হোক।

স্থানীয়রা বলছেন, এ ধরনের ঘটনায় কেবল বিচার নয়, বরং ভবিষ্যতে শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।

এখন সকলের দৃষ্টি সিলেট পুলিশের উপর, যারা এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের দায়িত্বে নিয়োজিত।

আরও পড়তে পারেন