আসিফ নজরুল
,

জেনেভা বিমানবন্দরে আসিফ নজরুলকে ঘিরে আওয়ামী সমর্থকদের উত্তেজনা, তারেক রহমানের নিন্দা

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার বৈঠক শেষে দেশে ফেরার পথে হেনস্তার শিকার আইন উপদেষ্টা

সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বিমানবন্দরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের সঙ্গে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা নিয়ে আলোচনা ছড়িয়ে পড়েছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, আসিফ নজরুলকে ঘিরে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের একটি দল উত্তেজিতভাবে তাকে ঘিরে রাখেন এবং নানা মন্তব্য করতে থাকেন।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গভর্নিং বডি ও সংস্থার অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে দেশে ফেরার জন্য বিমানবন্দরে যান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

দূতাবাসের প্রটোকল মেনে তিনি গাড়িতে করে বিমানবন্দরে পৌঁছান। কিন্তু সেখানে গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই একদল লোক এসে তাকে ঘিরে ধরে।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, উক্ত ব্যক্তিরা আসিফ নজরুলের দিকে তেড়ে যাচ্ছেন, তাকে সামনে এগোতে দিচ্ছেন না এবং বারবার “আপনি মিথ্যা বলছেন” বলছেন।

আসিফ নজরুল ভিডিওতে তাদের বলেন, “আপনি গায়ে হাত দিচ্ছেন কেন? এভাবে কথা বলতে পারেন না।”

ঘটনাটি সম্পর্কে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, সুইজারল্যান্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম জমাদার ও সাধারণ সম্পাদক শ্যামল খান সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং তাদের উপস্থিতিতেই উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।

এ ঘটনায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গভীর নিন্দা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “আসিফ নজরুলের সঙ্গে বিদেশের মাটিতে এহেন আচরণ শুধুমাত্র অনভিপ্রেতই নয় বরং দেশের আত্মমর্যাদার ওপর আঘাত।”

প্রটোকলে ঘাটতি, দূতাবাসের অবহেলা?

জেনেভা থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, আসিফ নজরুলের প্রটোকলে ত্রুটি ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। মিশন তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেনি, ফলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, দূতাবাসের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা না পাওয়ায় আইন উপদেষ্টা বিদেশে প্রটোকলের অভাব বোধ করেছেন এবং দুর্ব্যবহার মোকাবিলা করতে হয়েছে।

তারেক রহমানের কঠোর সমালোচনা

ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, “শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের দোসররা দেশের বাইরে গণতান্ত্রিক শক্তির বিরুদ্ধে এই ধরনের আচরণ করছে।”

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী মনোভাবের প্রতিফলন সুইজারল্যান্ডের মাটিতে দেখা গেছে। এই আচরণ শুধু আসিফ নজরুলের প্রতি অপমানই নয়, এটি গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের ওপরও আঘাত।

তারেক রহমান বলেন, “এই ঘটনা প্রমাণ করে, আওয়ামী লীগ একটি অপরাধ প্রবণ দল। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে তারা এখন গুণ্ডামি এবং হেনস্থা করার পথ বেছে নিচ্ছে।”

তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদী শক্তির প্রভাব থেকে দেশের বাইরে থাকা বাংলাদেশিদের মুক্ত রাখতে সংশ্লিষ্ট দেশের আইনি ব্যবস্থাকে অবহিত করা উচিত।”

‘পাকিস্তানি রাজাকার’ স্লোগান, উত্তেজনা তুঙ্গে

ভিডিওতে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের সমর্থকরা উচ্চস্বরে আসিফ নজরুলকে “পাকিস্তানি রাজাকার” বলে স্লোগান দিচ্ছেন।

তারা “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু” স্লোগানও দেন। স্লোগানের মাধ্যমে তারা রাজনৈতিক বিরোধ প্রকাশ করেন এবং বাংলাদেশ সরকারের সমর্থনকে জোরালোভাবে প্রমাণের চেষ্টা করেন।

ভিডিওতে এক পর্যায়ে আসিফ নজরুল বলতে শোনা যায়, “আপনাদের ল্যাঙ্গুয়েজ এমন কেন?” উত্তরে একজন বলেন, “আমরা স্বাধীনতার পক্ষের লোক, আপনারা বিপক্ষের লোক।”

ফ্যাসিবাদের প্রকাশ এবং গণতন্ত্রকামী প্রবাসীদের প্রতি তারেক রহমানের আহ্বান

তারেক রহমান বলেন, “আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের শত্রু, তাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকা দরকার।”

তিনি সুইজারল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশের গণতন্ত্রকামী বাংলাদেশিদের এ বিষয়ে আরও সোচ্চার হয়ে আওয়াজ তোলার আহ্বান জানান।

তারেক রহমান বলেন, “সারা বিশ্বে আওয়ামী লীগের অনৈতিক কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে হবে এবং তাদের গণতন্ত্র-বিরোধী চেহারা বিশ্বমঞ্চে প্রকাশ করতে হবে।”

তিনি বলেন, এই ধরনের হেনস্থাকারীদের চিন্হিত করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের ওপর এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে, তা দেখতে হবে।

ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রতিচ্ছবি

বিশ্লেষকরা বলছেন, সুইজারল্যান্ডের এ ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক উত্তেজনার প্রতিফলন।

গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ তাদের নিজ নিজ অবস্থানে অবিচল।

এ ঘটনার মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আরও পড়তে পারেন