বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় নেমেছে নাগরিক কমিটি ও ছাত্র সংগঠনগুলো
বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ এবং সংবিধান বাতিলের মতো দাবিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং নাগরিক কমিটি।
গত কয়েক দিনে এই দুই সংগঠন বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছে।
তাদের এই কার্যকলাপ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক আলোচনা।
বিশ্লেষকদের মতে, রাষ্ট্রপতির অপসারণ এবং সংবিধান সংশোধনের মতো পদক্ষেপ দেশের সাংবিধানিক স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের অবস্থান পর্যালোচনা করছে এবং ভবিষ্যৎ কৌশল ঠিক করতে ব্যস্ত।
কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন যে, এই ধরনের প্রক্রিয়া নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ঘটাতে পারে।
তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন, ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা বা নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে তারা মাঠে নামেননি।
বরং বৈষম্য এবং রাজনৈতিক সংস্কারের দাবিতে তাদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
‘কিংস পার্টি’ গঠনের গুঞ্জন
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী নেতারা এখন তিনভাগে বিভক্ত হয়ে বিভিন্ন ভূমিকায় কাজ করছেন।
সরকারের অধীনে কাজ করছেন কয়েকজন ছাত্রনেতা, যারা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন।
বাকিরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং নাগরিক কমিটির ব্যানারে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।
এই প্রক্রিয়ায় তাদের রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তুতি রয়েছে কিনা, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
তবে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানান, ‘কিংস পার্টি’ বা রাজনৈতিক দল গঠনের কোনো পরিকল্পনা তারা করছেন না।
তিনি বলেন, “ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে যারা নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য জনগণ ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
কিন্তু এর মানে এই নয় যে, আমরা রাজনৈতিক দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
নাগরিক কমিটি রাজনৈতিক দলে রূপ নেবে?
বাংলাদেশে নাগরিক কমিটি সম্প্রতি মাঠে নেমেছে এবং বিভিন্ন জেলার সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তুলেছে।
এতে দলটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্ন উঠছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, “আমরা চাই তরুণদের শক্তিকে ক্ষমতায় দেখতে।
এর মানে এই নয় যে নাগরিক কমিটি সরাসরি রাজনৈতিক দল গঠন করবে।”
তবে ভবিষ্যতে প্রয়োজনে রাজনৈতিক দল গঠনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি।
রাষ্ট্রপতির অপসারণে রাজনৈতিক সংকটের শঙ্কা
রাষ্ট্রপতির অপসারণের মতো দাবি দেশে সাংবিধানিক সংকট তৈরি করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
তাদের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ দেশে আরও অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক মহলেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, “ছাত্ররা যদি সত্যিই রাজনৈতিক দল গঠন করে, তবে এটি একটি বড় পরিবর্তনের সংকেত হতে পারে।
তবে এর জন্য সময় লাগবে, কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নতুন শক্তির প্রবেশ সবসময় চ্যালেঞ্জিং।”
ভবিষ্যৎ কী হবে?
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং নাগরিক কমিটির মধ্যে আন্দোলন কর্মসূচি কতটা কার্যকরী হবে তা নির্ভর করছে রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর।
তারা যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা করছে, সেটি ভবিষ্যতে নতুন দিকনির্দেশনা দিতে পারে।
কিন্তু এটি প্রেশার গ্রুপ হিসেবে থাকবে নাকি সত্যিকারের রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে, সেটি সময়ই বলে দেবে।