হৃদরোগসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত বিএনপি নেত্রীকে প্রথমে লন্ডন, পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য মাল্টি ডিসিপ্লিনারি সেন্টারে নেওয়ার পরিকল্পনা
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
তিনি জানান, প্রথমে তাকে লন্ডনে নেওয়া হবে এবং সেখান থেকে তৃতীয় কোনো দেশে উন্নত মাল্টি ডিসিপ্লিনারি মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
প্রায় ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন।
তার অসুস্থতার মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে হৃদরোগ, লিভার, এবং কিডনির সমস্যা।
ঢাকায় হৃদযন্ত্রে ইতোমধ্যেই পেসমেকার বসানো হয়েছে তার।
চিকিৎসকরা জানান, হৃদপিণ্ডে লাগানো এই পেসমেকার নিয়মিত সিগন্যাল পাঠিয়ে তার হার্টের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখছে।
এই অবস্থায় খালেদা জিয়ার জীবন রক্ষার্থে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া অত্যাবশ্যক বলে মনে করছেন তার পরিবার ও চিকিৎসকরা।
খালেদা জিয়ার পরিবার ইতিপূর্বে তাকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে একাধিকবার আবেদন করলেও তাতে সাড়া মেলেনি।
আবেদনে বলা হয়েছিলো, লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, এবং ক্রনিক কিডনি ডিজিজে আক্রান্ত হয়ে তার শারীরিক অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছে।
লং ডিসটেন্স এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত
এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়ার জন্য লং ডিসটেন্স এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করা হয়েছে।
তাকে বিদেশে নেওয়ার জন্য পাসপোর্ট ও ভিসার কার্যক্রমও সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি জানান, তার সঙ্গে চিকিৎসকসহ প্রায় পনেরো জনের একটি দল বিদেশে যাবে।
“আশা করছি, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে খুব শিগগিরই ম্যাডামকে বিদেশে নিয়ে যেতে পারব,” বলেন মি. হোসেন।
তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার জীবন রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে এবং আশা করা হচ্ছে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা তার স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হবে।
দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা নিয়ে রাজনীতি
খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য নেওয়া নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে।
বিএনপি পক্ষ থেকে তাকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতির জন্য বারবার সরকারকে অনুরোধ জানানো হলেও সরকার অনুমতি দেয়নি।
বিএনপির দাবি, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে অবহেলা করা হয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, দেশে তার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সব ব্যবস্থা আছে।
পরিবার ও চিকিৎসকদের অনুরোধ
খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা বলছেন, দেশের সীমিত চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে তার উন্নত চিকিৎসা সঠিকভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না।
“বিএনপি নেত্রীর জীবন এখন ঝুঁকির মুখে। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে নেওয়া প্রয়োজন,” বলেন তার চিকিৎসক জাহিদ হোসেন।
তিনি আরও বলেন, বিদেশে উন্নত প্রযুক্তি এবং দক্ষ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তার রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে তার সুস্থতার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পাবে।
আন্তর্জাতিক চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা
বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে নিয়ে যাওয়া হলেও তার স্বাস্থ্যের অবস্থার উপর নির্ভর করবে পরবর্তী চিকিৎসার ধাপ।
চিকিৎসকরা মনে করছেন, মাল্টি ডিসিপ্লিনারি মেডিকেল সেন্টারে সব ধরনের আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ পাওয়া যাবে।
এই ধরনের সেন্টারে সাধারণত হৃদরোগ, লিভার, এবং কিডনির মতো জটিল রোগের চিকিৎসা করা হয়।
এতে নানা বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা একসঙ্গে কাজ করেন।
পরিবারের উদ্বেগ ও আকুতি
খালেদা জিয়ার পরিবার বলছে, তারা তার দ্রুত আরোগ্যের জন্য উদ্বিগ্ন এবং এই কারণে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে নেওয়ার বিষয়ে সরকারকে বারবার অনুরোধ করেছেন।
তাদের দাবি, খালেদা জিয়া এখন শারীরিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল এবং জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন।
পরিবার থেকে জানানো হয়েছে, দেশের বাইরে তার চিকিৎসার জন্য আগে যে আবেদন করা হয়েছিলো সেখানে তার অসুস্থতার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছিলো।
তারা বলছেন, তার লিভার ও হৃদরোগের সমস্যাগুলি তাকে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত করছে এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসাই তার একমাত্র আশার আলো।
রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তে বিরোধী দল ও তার সমর্থকরা ক্ষুব্ধ।
বিএনপি নেতারা মনে করেন, খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি না দিয়ে তার জীবন ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
অপরদিকে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সরকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশের আইন অনুযায়ী যা করা যায়, সেটাই করা হচ্ছে।
কবে বিদেশে নেওয়া হবে?
তবে বিদেশে নেওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হলেও খালেদা জিয়াকে কবে নিয়ে যাওয়া হবে সেই বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য এখনো জানানো হয়নি।
চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানিয়েছেন, লন্ডনে পৌঁছানোর পর তার পরবর্তী চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, তাকে প্রথমে লন্ডনে নেওয়া হচ্ছে এবং পরবর্তীতে তার স্বাস্থ্যের অবস্থা অনুযায়ী তৃতীয় কোনো দেশে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে এই খবর উদ্বেগের পাশাপাশি আশার সঞ্চার করেছে।