নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে কৌতূহল, চলছে সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার কার্যক্রম
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নতুন নির্বাচনের সময় নির্ধারণ নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষত বিএনপি, নির্বাচনমুখী রোডম্যাপ প্রকাশে বিলম্বের অভিযোগ তুলেছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে, কবে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় নির্বাচন এবং নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কিনা।
গত মঙ্গলবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে একটি সার্চ কমিটি গঠন করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এ বিষয়ে বলেছেন, “এবার আমরা ভুয়া নির্বাচন করবো না, অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন করবো।” তবে ভোটার তালিকা হালনাগাদসহ প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে যে সময় লাগবে, সেটিও বিবেচনায় রাখার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছেন তিনি।
সরকার আরও জানিয়েছে, সংবিধান ও নির্বাচনি ব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে ছয়টি আলাদা কমিশন গঠন করা হয়েছে, যার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের কাজ অন্যতম। এই কমিশনগুলো ইতোমধ্যেই তাদের কাজ শুরু করেছে, তবে এখনও পর্যন্ত নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণা করা হয়নি। এর ফলে দেশের রাজনৈতিক মহলে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে এক ধরনের অস্থিরতা এবং ধোঁয়াশা।
নির্বাচনি রোডম্যাপ প্রকাশের দাবি বিএনপির
বিএনপি এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলো বলছে, নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে জনগণ জানতে চায় এবং সরকারের কাছে তারা সুনির্দিষ্ট একটি নির্বাচনি রোডম্যাপ চায়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “মানুষ জানতে চায়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার দিকে আমরা কবে এগোবো। এই জন্যই সরকারের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করা জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, জনগণের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে যে অনিশ্চয়তা ও দুশ্চিন্তা রয়েছে, সেটি দূর করার জন্যই সরকারকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। বিএনপির মতে, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সুষ্ঠু ও সময়মতো কার্যক্রমের মাধ্যমেই একটি স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব।
সরকারি কর্মকর্তারা যদিও বলছেন, তারা একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে কাজ করছেন, তবে নতুন নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম কবে থেকে শুরু হবে এবং নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ কবে নির্ধারিত হবে—সেই বিষয়ে এখনও কোনো স্পষ্ট ঘোষণা আসেনি।
নির্বাচন ও সংবিধান সংস্কার: কাজ কতদূর?
নির্বাচন ব্যবস্থা এবং সংবিধান সংস্কারের জন্য সরকার ইতোমধ্যে একটি বিশেষ কমিশন গঠন করেছে। নির্বাচনি সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার জানান, কমিশনের লক্ষ্য ডিসেম্বরে সংস্কার প্রস্তাবনাগুলো চূড়ান্ত করে সরকারের কাছে জমা দেওয়া। তবে এ বিষয়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বদিউল আলম বলেন, “আমাদের প্রস্তাবনাগুলোর ভিত্তিতে কাজ করবে নতুন নির্বাচন কমিশন। তবে সুষ্ঠু সংস্কারের জন্য রাজনৈতিক ঐকমত্য জরুরি।” বিরোধী দলগুলো বলছে, যদিও বিভিন্ন ধরনের সংস্কার কার্যক্রম চলছে, তবুও এই অল্প সময়ের মধ্যে সব কার্যক্রম শেষ করা সম্ভব হবে কিনা, সে নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
সার্চ কমিটি: নির্বাচন কমিশন গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। বিরোধী দল বিএনপি বলছে, নির্বাচন কমিশনের জন্য যোগ্য এবং নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নির্বাচন করা জরুরি, যাদের ওপরে সকলের আস্থা থাকবে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “সরকার যেন বেশি সময় নষ্ট না করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভোটের আয়োজন করে। তাতে মানুষের মধ্যে নির্বাচনকেন্দ্রিক দুশ্চিন্তা দূর হবে।”
সরকার বলছে, তারা একটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। তবে নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা এবং নির্বাচন কমিশনের পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট বার্তা প্রদান করা হয়নি, যা বিরোধী দলগুলোকে আরও উদ্বিগ্ন করেছে।
নির্বাচন কমিশনের কাজ শুরু হবে কবে?
গত মাসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পরই নির্বাচন কমিশনের সভাপতি কাজী হাবিবুল আউয়ালসহ সদস্যরা পদত্যাগ করেন। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইনগত প্রক্রিয়া এবং সার্চ কমিটির মাধ্যমে উপযুক্ত প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে।
বিএনপি বলছে, সার্চ কমিটি যেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। বিএনপির মতে, জনগণের মধ্যে নির্বাচন সংক্রান্ত যে উদ্বেগ রয়েছে, তা দূর করতে এই প্রক্রিয়ার কোনো দেরি হওয়া উচিত নয়।
নির্বাচনি সংস্কারের মাধ্যমে সুষ্ঠু ভোট আয়োজনের চেষ্টা
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে বদিউল আলম মজুমদারের নেতৃত্বে কমিশন বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ভোটার তালিকা হালনাগাদ, সীমানা নির্ধারণসহ নির্বাচনি ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক চিহ্নিত করে সংস্কার আনার চেষ্টা চলছে। নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর সুষ্ঠু ভোট আয়োজনের পূর্বপ্রস্তুতি হিসাবে এই সকল কার্যক্রম আরও ত্বরান্বিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সংস্কার কার্যক্রম শেষ হলে, তারা একটি সঠিক ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইন প্রণয়ন করবেন, যা ভোটারদের আস্থা অর্জনে সহায়ক হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সংস্কারগুলো সফলভাবে সম্পন্ন হলে, দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনি পরিবেশ তৈরি হবে এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।
ভবিষ্যতের নির্বাচনের রোডম্যাপ কীভাবে নির্ধারণ করবে?
নির্বাচনি রোডম্যাপ এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সরকারের করণীয় সম্পর্কে এখনও রয়েছে বিভিন্ন প্রশ্ন। বিরোধী দলগুলোর দাবি, সরকার যেন রোডম্যাপ প্রকাশ করে এবং আগামী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে। সরকারের পক্ষ থেকে এখনও স্পষ্ট কোনো ঘোষণা না আসায় ভোটারদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ বিরাজ করছে।
নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, ভবিষ্যৎ নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিরোধী দলগুলো রাজনৈতিক ঐক্যমত্যে পৌঁছানোর মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করা সম্ভব। তবে সরকারের সময়মতো রোডম্যাপ ঘোষণা ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে।
এই অবস্থায় বিরোধী দলগুলোও তাদের বক্তব্য স্পষ্ট করছে, যাতে জনগণের মধ্যে স্থিরতা ও আস্থার পরিবেশ তৈরি হয়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামী নির্বাচনে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে এবং একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ বজায় রাখতে সরকারের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট ও স্বচ্ছ রোডম্যাপ ঘোষণা করা গুরুত্বপূর্ণ।