খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান
,

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের নির্বাচনি প্রস্তুতি ও মাঠ পর্যায়ে সক্রিয়তা বৃদ্ধি

নির্বাচনে জয়ের প্রস্তুতি জোরদারে দলের নীতি নির্ধারণী প্রস্তাবনা, স্থানীয় পর্যায়ে সাংগঠনিক পুনর্গঠন ও গণসংযোগের তৎপরতা শুরু

আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতায় ফেরার লক্ষ্য নিয়ে মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। বিভিন্ন নির্বাচনি এলাকায় তারা স্থানীয় জনগণের সমর্থন লাভের জন্য প্রতিনিয়ত জনসংযোগ চালাচ্ছেন এবং সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও অংশ নিচ্ছেন।

বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মতে, এই তৎপরতার মূল লক্ষ্য দল ও প্রার্থীদের নিজেদের অবস্থান সুসংহত করে প্রস্তুত রাখা। বিশেষ করে গত ১৫ বছরে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকা নেতাদের প্রাধান্য দিয়ে নির্বাচনমুখী প্রস্তুতিকে শক্তিশালী করা হচ্ছে।

দলের একাধিক শীর্ষ নেতা জানান, বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিটি ইউনিটকে পুনর্গঠন এবং সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করার জন্য তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের চিঠি দিয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে ছাত্রদল, যুবদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দল দেশের প্রতিটি জেলায় যৌথ কর্মী সভা করছে।

একইসঙ্গে, বিএনপির পক্ষ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সামাজিক, ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক অনুষ্ঠানগুলোতে অংশ নিয়ে স্থানীয় জনগণের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় সরকার গঠনের পরিকল্পনায় সমমনা দলের সহযোগিতা

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন যে, দল নির্বাচনে জয়ী হলে সমমনা দলগুলোকে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। সেই ধারাবাহিকতায় সম্ভাব্য সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতিতেও এই পরিকল্পনা গুরুত্ব পাচ্ছে।

বিএনপির নেতারা বলেন, সমমনা দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় বিএনপির সহযোগিতা করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলের অন্যতম নীতি নির্ধারক সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, “নির্বাচনমুখী দল হিসেবে আমাদের একটি প্রস্তুতি সবসময়ই থাকে। তবে এবার সেটিকে সময়োপযোগী করে আমরা আপডেট করছি।”

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রাধান্য

বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাদের মতে, নির্বাচনে এবার প্রাধান্য পাবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা। বিশেষ করে ছাত্রদল থেকে উঠে আসা নেতারা যারা দলের সহযোগী সংগঠনের দায়িত্ব পালন করছেন, তাদেরকেও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিবেচনায় রাখা হয়েছে।

দলটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, “ভবিষ্যতে দলের সাংগঠনিক দক্ষতা বাড়াতে যারা দীর্ঘদিন ধরেই মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় ছিলেন, তাদেরকেই মূলত প্রাধান্য দেওয়া হবে।”

২০১৮ সালের প্রার্থীদের অধিক গুরুত্ব

দলটির কেন্দ্রীয় নীতি নির্ধারণী ফোরামের একটি সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং সেসময় সক্রিয় ভূমিকা পালন করা প্রার্থীরাই এবারের নির্বাচনে অধিক গুরুত্ব পাচ্ছেন।

যারা দীর্ঘদিন মাঠে ছিলেন না, তাদের নিয়ে দলের মধ্যে একটি আলোচনা চলছে। তবে যারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন, তারা নির্বাচনে কতটা প্রাধান্য পাবেন তা দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।

এমরান সালেহ প্রিন্স জানান, তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের সমস্যা ও চাহিদাগুলো সরাসরি জানার এবং স্থানীয় জনগণের সাথে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপনের উপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

সাংগঠনিক পুনর্গঠন ও নির্বাচনমুখী তৎপরতা

বিএনপির বিভিন্ন জেলার সাংগঠনিক কাঠামোতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। ইতিমধ্যে মাগুরা, কুষ্টিয়া, এবং বরগুনাসহ কয়েকটি জেলার কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে।

খুলনার আহ্বায়ক কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়েছে এবং নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার বিভিন্ন কমিটিতেও পরিবর্তন আনার কাজ চলছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, বিভিন্ন জেলায় ছাত্রদল, যুবদল এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের শীর্ষ নেতারা সফর করে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে কর্মী সভায় অংশ নিচ্ছেন।

এই ধরনের সমাবেশের মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ের তরুণ নেতাকর্মীদের করণীয় বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে এবং তাদের মধ্যে নির্বাচনী উদ্দীপনা জাগ্রত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সামাজিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সক্রিয় অংশগ্রহণ

বিএনপির নেতারা বলছেন, দলের সকল স্তরের নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিশেষ করে সামাজিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে প্রার্থীরা স্থানীয় জনগণের সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলছেন।

দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রেজাউর রহমান বলেন, “আমাদের সাবেক এমপি দীর্ঘদিন পর এলাকায় ফিরে সামাজিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন।”

নির্বাচনি কর্মকাণ্ডে তৎপর প্রার্থীরা

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় ব্যাপক জনসংযোগ শুরু করেছেন। তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ এলাকার জনগণের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে তাদের দাবি ও চাহিদাগুলো জানার চেষ্টা করছেন।

এছাড়াও, সাম্প্রতিক বন্যা ও পূজার সময় প্রার্থীরা স্থানীয় জনগণের পাশে থেকে কার্যক্রম চালিয়েছেন বলে জানান সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা

বিএনপির নীতি নির্ধারণী ফোরাম থেকে জানানো হয়েছে যে, দলীয়ভাবে তারা আগামী নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিটি স্তরে পরিকল্পনা গ্রহণ করছে।

সম্ভাব্য প্রার্থীদের দিয়ে জনসংযোগ ও সাংগঠনিক পুনর্গঠনের কাজ চালানোর পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, “জাতীয় সরকার গঠনের উদ্দেশ্যে নির্বাচনে জয়ের পরিকল্পনা নিয়ে আমরা মাঠে কাজ করছি।”

এইভাবে কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার লক্ষ্যে দলের সক্রিয়তা বাড়ানোর ওপরই জোর দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়তে পারেন