শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর পরিবারের সদস্যদের গন্তব্য নিয়ে ধোঁয়াশা
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। এ ঘটনার পর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতা আত্মগোপনে চলে যান। মাঝারি এবং তৃণমূল পর্যায়ের অনেক প্রভাবশালী নেতারাও গা ঢাকা দিয়েছেন। শেখ পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, যা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
শুধু শেখ হাসিনার অবস্থান কিছুটা পরিষ্কার, তিনি বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। তবে তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা কোথায় আছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাদের কয়েকজন সদস্য আত্মগোপনে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে, কিন্তু তারা বর্তমানে কোথায় রয়েছেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই।
শেখ হাসিনা ভারতে, শেখ রেহানার অবস্থান অজানা
সরকার পতনের পর শেখ হাসিনা ভারতীয় রাজধানী দিল্লিতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে। তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাও ঢাকা ছেড়েছেন, তবে তাঁর সঠিক অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। শেখ রেহানার ব্রিটিশ পাসপোর্ট থাকায়, তিনি বড় বোনের সঙ্গে ভারতে রয়েছেন নাকি অন্য কোথাও গিয়েছেন, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
শেখ সেলিমের পরিবার আত্মগোপনে
শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিমের পরিবারের অবস্থানও অজানা। পাঁচ আগস্টের পর থেকে তাদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শেখ সেলিম ঢাকায় রয়েছেন বলে ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো দাবি করছে, তবে তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। শেখ সেলিমের দুই সন্তান, শেখ ফজলে শামস পরশ এবং শেখ ফজলে নূর তাপসও আত্মগোপনে আছেন।
তাপস ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং ঢাকার সংসদ সদস্য। পাঁচ আগস্টের আগে সিঙ্গাপুরে যাওয়ার পর থেকে তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। শেখ পরশও দেশ ছেড়ে চলে গেছেন বলে জানা গেছে।
বরিশালের আবুল হাসনাতের পরিবার
শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। ৫ আগস্টের পর তিনি এবং তার ছোট ছেলে সুকান্ত আব্দুল্লাহ দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার আরেক ছেলে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ কোথায় আছেন, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।
খুলনার শেখ হেলাল ও শেখ তন্ময়
বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ আবু নাসেরের দুই ছেলে শেখ হেলাল উদ্দিন ও শেখ তন্ময় ভারতের দিল্লিতে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। তবে তাদের তিন ভাই শেখ সোহেল, শেখ রুবেল এবং শেখ বেলালের অবস্থান নিয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শেখ পরিবারের সদস্যরা
শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় অনেকদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। আর তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক মহাপরিচালক হিসেবে ভারতে কর্মরত রয়েছেন।
শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি কোথায় আছেন, সেটি অজানা। তবে তাঁর মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং তার আরেক মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীও যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন।
আইএসপিআরের বিবৃতি ও নিরাপত্তা আশ্রয়
৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে জানায়, রাজনৈতিক প্রাণনাশের আশঙ্কায় ২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে সেনানিবাসে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল। অনেকেই ধারণা করছেন, শেখ পরিবারের কয়েকজন সদস্যও এই তালিকায় থাকতে পারেন।
শেখ পরিবারের রাজনীতিতে প্রভাব
২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত শেখ পরিবারের আটজন সদস্য মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর পদে ছিলেন। সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে তিনজন দায়িত্ব পালন করেন, আর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদেও পরিবারের সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। দেশের রাজনীতিতে তাদের এই প্রভাবের কারণে বর্তমানে পরিবারের সদস্যদের গন্তব্য নিয়ে জনমনে চরম উদ্বেগ রয়েছে।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রভাব
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থাকা শেখ পরিবারের প্রভাবশালী সদস্যদের হঠাৎ করে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ভয় এবং অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। মামলা ও গ্রেপ্তারের আশঙ্কায় অনেক নেতাকর্মী প্রকাশ্যে আসছেন না, আর যৌথ বাহিনী দলীয় বিভিন্ন পদে থাকা অনেককে আটক করেছে।
পরিস্থিতি যেভাবে অগ্রসর হচ্ছে, তা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণ করবে। তবে শেখ পরিবারের সদস্যদের অবস্থান এবং তাদের রাজনৈতিক সক্রিয়তা আবার কবে শুরু হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।