ইরান ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে একযোগে শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
এই হামলার পরপরই ইসরায়েলের বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করেছে যে ইরানের পক্ষ থেকে প্রায় ১৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে।
তাদের দাবি, বহু ক্ষেপণাস্ত্র আকাশেই ভূপাতিত করা সম্ভব হয়েছে, তবে ইসরায়েলের মধ্য এবং দক্ষিণাঞ্চলে কিছু আঘাতের ঘটনা ঘটেছে।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং হুমকি দিয়েছে যে ইরানকে এর “পরিণাম ভোগ করতে হবে”।
তেল আবিবের স্বাস্থ্যকর্মীদের মতে, হামলার ফলে অন্তত দুইজন সামান্য আহত হয়েছেন।
ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সম্প্রতি হামাস, হেজবুল্লাহ এবং ইরানের সিনিয়র কমান্ডারদের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে।
ইরান আরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, ইসরায়েল যদি এই হামলার জবাব দেয়, তবে তাদের আরও বড় আকারের হামলার মুখোমুখি হতে হবে।
প্রতিশোধের অঙ্গীকার
শনিবারই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হেজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহর হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন।
ইরানের এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের পরপরই শুরু হয়েছে।
ইসরায়েলি বাহিনী দক্ষিণ লেবাননে ‘হেজবুল্লাহ সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তু’ বলে দাবি করা স্থানে হামলা চালাতে শুরু করে।
এই অভিযান এমন সময় শুরু হয় যখন গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইসরায়েল ও হেজবুল্লাহর মধ্যে দীর্ঘদিনের সীমান্ত সংঘর্ষের উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।
ইসরায়েল বলছে, এই অভিযানের উদ্দেশ্য হলো সীমান্ত এলাকায় হেজবুল্লাহর হামলার ফলে বাস্তুচ্যুত বাসিন্দাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনা।
আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা
মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল ও হেজবুল্লাহর মধ্যে বিবাদ নতুন করে তীব্র হয়ে উঠেছে।
এর ফলে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা ইরান এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়কে এই সংঘাতে টেনে আনতে পারে।
ইরানের সাম্প্রতিক হামলাগুলোর প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে বড় ধরনের যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি একটি ভিডিও বার্তায় ইসরায়েলি জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, “আমরা ইরানের অশুভ অক্ষের বিরুদ্ধে অভিযানে রয়েছি”।
যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারি
ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সতর্ক করে বলেছেন, “ইরান যদি ইসরায়েলে সরাসরি সামরিক হামলা চালায়, তবে তার জন্য ইরানকে চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে”।
যুক্তরাষ্ট্রের এই বিবৃতি ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে শত্রুতা রয়েছে। ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন এবং ইরানের বিরুদ্ধে নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞার ফলে এই শত্রুতা ক্রমেই বেড়েছে।
অতীতের সংঘাত
গত এপ্রিলে ইসরায়েল সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালায়।
ওই হামলায় কয়েকজন শীর্ষ ইরানি কমান্ডার নিহত হন। এর প্রতিশোধ হিসেবে ইরান ইসরায়েলে ৩০০টির বেশি ড্রোন হামলা চালায়।
সেসময় ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের আরব মিত্ররা একত্রে প্রায় সব ড্রোন ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়েছিল।
তবে ইসরায়েলের একটি বিমান ঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
এর জবাবে ইসরায়েল ইরানের একটি বিমান ঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালায়।
এই হামলা-পাল্টা হামলার চক্রে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়ে ওঠে।
সীমান্ত সংঘর্ষ ও হেজবুল্লাহ
হেজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের সংঘাত নতুন মোড় নিচ্ছে।
গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর সাম্প্রতিক হামলার ফলে এই উত্তেজনা আরও বাড়তে শুরু করে।
ইরান ও হেজবুল্লাহ একে অপরের মিত্র হওয়ায় লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলের সামরিক অভিযান ইরানকে আরও উত্তেজিত করে তুলেছে।
ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড বলছে, ইসরায়েলের হামলার জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি তাদের রয়েছে এবং যদি ইসরায়েল আবার আক্রমণ চালায়, তবে আরও বড় আকারের হামলা চালানো হবে।
আঞ্চলিক নিরাপত্তা সংকট
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।
সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এই অঞ্চলে এক নতুন সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি করেছে, যেখানে বড় ধরনের সামরিক সংঘর্ষ ঘটতে পারে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, “আমাদের লক্ষ্য ইরানের সামরিক বাহিনীর সক্ষমতাকে খর্ব করা।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আমাদের পাশে চাই।”
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সংঘাত যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তবে এটি একটি বড় আকারের আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নিতে পারে।
ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি বিরোধ এবং ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থন এই সংঘাতকে আরও জটিল করে তুলেছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এই সংঘাত শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের জন্য আহ্বান জানানো হলেও উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা কম বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এখন পর্যন্ত জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এই সংঘাত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিশ্বনেতারা উভয় পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির ফলে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোকেও এই সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে।
বিশেষত, যুক্তরাষ্ট্র ও তার আরব মিত্ররা ইরানের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিতে পারে।
পরিণতি কী?
এই সংঘাত কতদূর গড়াবে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে।
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির ফলে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় ধরনের যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে এই সংঘাত গোটা অঞ্চলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলতে পারে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে এই সংঘাত নিরসন করা না গেলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে এ ধরনের সংঘাত ইতিহাসে নতুন নয়, তবে এই সংঘাতের পরিণতি যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা এখনও স্পষ্ট নয়।
বিশ্ব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে
বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই সংঘাতের প্রতিটি পর্যায় গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
আন্তর্জাতিক নেতারা উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছেন।
তবে উভয় দেশের সরকারই নিজেদের সামরিক পদক্ষেপের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, যা এই সংঘাতের সমাপ্তির ইঙ্গিত দেয় না।
বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান থাকলেও ইরান ও ইসরায়েলের সাম্প্রতিক কার্যক্রমে পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।