বাংলাদেশী টাকা
,

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বন্যা ত্রাণ বিতরণ নিয়ে প্রশ্ন ও সমালোচনা: টাকা কোথায় যাচ্ছে?

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে সংগৃহীত তহবিল নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। গত আগস্টে বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় চালু হওয়া গণত্রাণ সংগ্রহে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেলেও, ত্রাণ তহবিলে জমাকৃত অর্থের সঠিক ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়ে জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে, এবং তহবিলের টাকার স্বচ্ছতা নিয়ে সমালোচনাও শুরু হয়েছে।

গণত্রাণ সংগ্রহের বিশাল সাড়া

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা আঘাত হানার পর গত ২২শে অগাস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) থেকে শুরু হয় এই ত্রাণ সংগ্রহের আহ্বান। অসংখ্য মানুষ তাদের সাধ্য অনুযায়ী এই উদ্যোগে অংশ নেয়। অনেকেই নিজেদের জমানো অর্থ থেকে অবদান রাখেন, এমনকি ছোট ছোট শিশুদেরও মাটির ব্যাংক ভেঙে টাকা দিতে দেখা যায়। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে তহবিলে জমা পড়ে প্রায় ১১ কোটি ১০ লাখ টাকা। বিভিন্ন ট্রাকে করে ১৯১টি ট্রাকে বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করা হয়।

ব্যাংকে অব্যবহৃত অর্থ

এত বড় অংকের অর্থ সংগ্রহের পরও বর্তমানে প্রায় ৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা অব্যবহৃত অবস্থায় ব্যাংকে জমা রয়েছে। ত্রাণ তহবিলের এই অব্যবহৃত অর্থ নিয়ে সাম্প্রতিক সময়গুলোতে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, কেন এই অর্থ এখনও বন্যাক্রান্তদের সহায়তায় ব্যয় করা হয়নি? কেউ কেউ আবার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও তুলছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিলয় মাহফুজ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা যারা এই উদ্যোগে অংশ নিয়েছিলাম, তারা প্রত্যাশা করেছিলাম বন্যাদুর্গতদের জন্য এই অর্থ তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহার করা হবে। কিন্তু এখন ব্যাংকে টাকা পড়ে আছে শুনে আমরা হতাশ।”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা

সমালোচনার মুখে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বিবিসি বাংলাকে জানান যে, তহবিলের সমস্ত অর্থের হিসাব তাদের কাছে রয়েছে এবং কোনো ধরনের আত্মসাতের অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, “তহবিলের টাকা ব্যাংকে রাখা হয়েছে সুনির্দিষ্টভাবে পরিচালিত একটি অ্যাকাউন্টে, যেখানে অর্থ তুলতে গেলে তিন জনের সম্মিলিত স্বাক্ষর প্রয়োজন। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকও আছেন, ফলে কেউ এককভাবে এই অর্থ ব্যবহারের সুযোগ পাবে না।”

পরবর্তী ধাপে অর্থ ব্যবহার

হাসনাত আব্দুল্লাহ জানান, প্রাথমিক ত্রাণ কার্যক্রম শেষ হলেও, তহবিলের অবশিষ্ট অর্থ মূলত বন্যার পরবর্তী সময়ে পুনর্বাসনের জন্য রাখা হয়েছে। তার ভাষ্যমতে, বন্যার পর ক্ষতিগ্রস্তদের দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে, বিশেষ করে বাড়িঘর পুনর্নির্মাণ এবং অন্যান্য সহায়তা দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, “আমরা শিগগিরই এই অর্থ ব্যয়ের পরিকল্পনা শুরু করবো। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য সরকারের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করার পরিকল্পনা করছি।”

স্বচ্ছতা ও অডিট

সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার জবাবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জানায় যে, তহবিলের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে অর্থের আয়-ব্যয় নিরীক্ষা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিএ ফার্মের মাধ্যমে এই নিরীক্ষা করা হচ্ছে এবং শিগগিরই এর রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে। হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আমরা স্বচ্ছতার ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি এবং আশা করছি যে, নিরীক্ষার পর কোনো সন্দেহ থাকবে না।”

সবার চোখ এখন অডিট রিপোর্টের দিকে

অবশিষ্ট ৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা নিয়ে যে বিতর্ক উঠেছে, তা নিরসনে তহবিলের আয়-ব্যয় নিরীক্ষার রিপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। একদিকে যারা ত্রাণ তহবিলে অর্থ দিয়েছেন, তারা আশা করছেন, অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহৃত হবে এবং এই সংকট মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও এই তহবিলের সঠিক ব্যবহারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানিয়েছে।

আরও পড়তে পারেন