বাংলাদেশ সরকার পলিথিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে। আগামী ১লা অক্টোবর থেকে দেশের সব সুপারশপে পলিথিনের শপিং ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
বিকল্প হিসেবে পাট ও কাপড়ের ব্যাগের ব্যবহার
সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সুপারশপের মালিক এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে বৈঠক শেষে এই নির্দেশনা দেন তিনি। পলিথিনের শপিং ব্যাগের বিকল্প হিসেবে সুপারশপগুলোতে পাট ও কাপড়ের ব্যাগ রাখার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফারহিনা আহমেদ বলেন, “পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার তো আগেই সরকার নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু নানান কারণে এর ব্যবহার বন্ধ করা যায়নি। এখন সুপারশপের মাধ্যমে আমরা নতুন করে সিদ্ধান্তটি কার্যকর করার চেষ্টা করছি।”
সুপারশপ মালিকদের সহযোগিতা
সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সুপারশপ মালিকরা সহযোগিতা করবেন বলে জানিয়েছেন মিজ আহমেদ। তিনি বলেন, “আমরা কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছি না। উনাদের সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে উনারাও আমাদের কাছে কিছু সহযোগিতা চেয়েছেন। আমরা সেগুলো বিবেচনা করছি।”
এদিকে, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সুপারশপের পর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য দোকানপাটেও পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করা হবে। এই পদক্ষেপের ফলে পলিথিনের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব বিকল্প ব্যবহারের উদ্যোগ জোরদার হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আগের নিষেধাজ্ঞার পুনরুজ্জীবন
২০০২ সালে বাংলাদেশ সরকার পলিথিনের শপিং ব্যাগ উৎপাদন, ব্যবহার, বিপণন, এবং বাজারজাতকরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। তবে নিষেধাজ্ঞাটি সেভাবে কার্যকর হয়নি। পরিবেশ সচিব ফারহিনা আহমেদ উল্লেখ করেছেন যে, “পলিথিনের ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করার জন্য আমরা নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।”
তিনি আরও জানান, “সরকারের পক্ষ থেকে প্রচারণা এবং সজাগতা বৃদ্ধির জন্য সুপারশপ মালিকদের সাথে আলোচনা করে পলিথিনের ব্যবহার কমানোর প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।”
শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা ও প্রচারণা
পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে সচেতনতা তৈরিতে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই প্রচারণায় তরুণ ও শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে, চলতি মাসের মধ্যভাগ থেকে দেশজুড়ে এ বিষয়ে প্রচারণা চালানো হবে।
পলিথিনের বিকল্প ব্যাগের মেলা
পরিবেশ বান্ধব ব্যাগের ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে পরিবেশ অধিদপ্তরের আয়োজনে আগামী ৩০শে সেপ্টেম্বরের মধ্যে একটি মেলার আয়োজন করা হবে। মেলায় পলিথিনের বিকল্প হিসেবে পাট, কাপড়, এবং অন্যান্য পরিবেশবান্ধব ব্যাগের উৎপাদনকারীরা অংশ নেবেন। এ মেলার মাধ্যমে জনগণের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে চ্যালেঞ্জ
যদিও পলিথিন নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তটি দীর্ঘমেয়াদী হলেও, এটি বাস্তবায়নে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। পলিথিনের সহজলভ্যতা এবং কম খরচের কারণে এটি বাংলাদেশের বাজারে এখনও জনপ্রিয়। এছাড়া, পলিথিনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত পাট এবং কাপড়ের ব্যাগের উৎপাদন ও বিতরণে সরকারের আরও উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ হানিফুল্লাহ বলেন, “সরকারের নতুন এই উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তবে পলিথিনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত ব্যাগগুলোর সহজলভ্যতা ও সাশ্রয়ী মূল্য নিশ্চিত করা জরুরি। তবেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।”
পরিবেশ রক্ষায় সুপারশপের উদ্যোগ
পরিবেশবাদী গোষ্ঠীগুলো সরকারকে সমর্থন করে বলেছে যে, পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার এই সিদ্ধান্ত দেশের পরিবেশ সংরক্ষণে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে। সুপারশপগুলোতে এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ কমবে এবং দেশের জলাশয়গুলো পলিথিনমুক্ত রাখতে সাহায্য করবে।
তবে, এই নিষেধাজ্ঞার সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন নির্ভর করবে সরকার ও সুপারশপ মালিকদের একত্রিত প্রচেষ্টার ওপর। সঠিক সমন্বয়ের মাধ্যমে পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরকারের এই নতুন সিদ্ধান্তটি কার্যকর হলে, দেশের পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে। তবে এটি কার্যকর করতে হলে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং পরিবেশবান্ধব বিকল্পগুলোর সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
সরকার ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সম্মিলিত প্রচেষ্টায়, বাংলাদেশ একটি পরিবেশবান্ধব দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সক্ষম হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।