দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চাঁদাবাজি ও দখলবাজির ঘটনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন যে থানা থেকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। ভুক্তভোগীরা প্রতিদিন শত শত অভিযোগ করলেও মাঠ পর্যায়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের অভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের পাশাপাশি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী এবং পেশাদার অপরাধীরাও এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করছে।
চট্টগ্রামে বাণিজ্য মেলা নিয়ে সংঘর্ষ, যুবদল কর্মী নিহত
চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলায় বাণিজ্য মেলায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে এক যুবদল কর্মী নিহত হয়েছেন।
সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় মীরসরাই স্টেডিয়ামে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
মীরসরাই পৌর বিএনপির সদস্য সচিব জাহিদ হোসাইনের অনুসারীদের সঙ্গে যুবদলের আহ্বায়ক কামরুল হাসানের অনুসারীদের বাগবিতণ্ডা থেকে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
পরে কামরুল হাসানের কর্মীরা জাহিদ হোসাইনের বাড়িতে হামলা চালায়।
সংঘর্ষে গুরুতর আহত যুবদল কর্মী জাহেদ হোসেন মুন্না হাসপাতালে মারা যান।
পুলিশ জানিয়েছে, দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে আরও পাঁচজন আহত হয়েছেন।
গাজীপুরে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা, থানায় জামায়াতের বিক্ষোভ
গাজীপুরের জয়দেবপুর থানায় আটক এক আওয়ামী লীগ নেতাকে ছাড়িয়ে নিতে বিক্ষোভ করেছে জামায়াত নেতারা।
সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল সিকদারকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়।
আটকের পর ৭০-৮০ জন জামায়াত নেতাকর্মী থানায় এসে তাকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানান।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, শফিকুল সিকদারকে ছাড়াতে চাপ দেওয়া হয়।
অপরদিকে, জামায়াতের গাজীপুর সদর উপজেলার নায়েবে আমির দাবি করেন, আটক ব্যক্তি বর্তমানে তাদের সংগঠনের সদস্য।
এই ঘটনাগুলো পুলিশ প্রশাসনের দুর্বলতার আভাস দিচ্ছে বলে মত বিশ্লেষকদের।
মুন্সীগঞ্জে যুবদল নেতাকে থানায় থেকে ছিনিয়ে নেওয়া
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে থানার হাজত থেকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা নিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তারিকুল ইসলামকে একটি মামলায় আটক করা হয়।
পরবর্তীতে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা থানায় এসে তাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
রাত ১০টায় স্লোগান দিয়ে নেতাকর্মীরা জোর করে থানার ভেতরে ঢুকে তারিকুলকে ছিনিয়ে নিয়ে যান।
পরবর্তী সময়ে তারিকুলকে পুনরায় গ্রেফতার করলেও এই ঘটনায় থানার ওসিকে ক্লোজ করা হয়েছে।
তবে যুবদলের শীর্ষ নেতৃত্বের দাবি, তারা এই ধরনের কর্মকাণ্ড সমর্থন করেন না।
রাজধানীতে চাঁদাবাজি ও দখল নিয়ে আতঙ্ক
রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় দখল ও চাঁদাবাজির ঘটনা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
হাতিরঝিল এলাকায় এক প্রবাসী তার জমি রক্ষা করতে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন।
এ ছাড়া মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় এক ব্যবসায়ীর বহুতল ভবন নির্মাণে বাধা দিচ্ছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা।
ঐ নেতা ফ্ল্যাট বা টাকা দাবি করলেও ব্যবসায়ী তা দিতে রাজি হননি।
ফলে নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে।
এদিকে, গুলিস্তান ও ফুলবাড়িয়া এলাকার মার্কেটগুলোতেও চাঁদাবাজি ও নিয়ন্ত্রণের হাতবদল ঘটেছে।
ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে রয়েছেন এবং অভিযোগ করেছেন, চাঁদাবাজির সঙ্গে মার্কেট কমিটির নেতারাও যুক্ত।
সারা দেশের দখলবাজি ও চাঁদাবাজির ঘটনাগুলোতে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা স্পষ্ট। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে, তবু বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটছে না বলে ভুক্তভোগীরা দাবি করেছেন।