ঢাকা ওয়াসার পানির দাম দেড় দশকে ১৬ বার বাড়ানোর পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যও ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন, পূর্ববর্তী সরকারের দুর্নীতি ও লুক্কায়িত ব্যয়ের কারণেই এ বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও একই ধারাবাহিকতা বজায় রাখছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পানির দামে ক্রমাগত বৃদ্ধির চাপ
ঢাকা ওয়াসার পানির দাম দেড় দশকে ১৬ বার বাড়ানো হয়েছে।
সবশেষ ২০২৩ সালের ১ জুলাই পানির দাম প্রতি হাজার লিটারে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ১৬ টাকা ৭০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়।
২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা তাকসিম এ খানের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
এমনকি পানির দাম নির্ধারণে ওয়াটার রেগুলেটরি বডি তৈরির উদ্যোগও পূর্ববর্তী সরকার বাতিল করে।
এর ফলে ওয়াসা নিজের মতো করে পানি সরবরাহের দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি রাজশাহী ওয়াসাও পানির দাম ৩০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়ে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, ওয়াসার প্রকল্পগুলোয় সিস্টেম লস ও দুর্নীতি জনজীবনে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে।
বিদ্যুৎ খাতে ১২ বছরে ১৪ বার খুচরা মূল্যবৃদ্ধি
বিদ্যুৎ খাতে দেড় দশকে ১৪ বার খুচরা পর্যায়ে এবং ১২ বার পাইকারি পর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে।
২০০৯ সাল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২৫ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতা বৃদ্ধি সত্ত্বেও গ্রাহকের খরচ কমানো যায়নি।
বরং ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ দেড় লাখ কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ ছিল ৩৯ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা।
বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় ১১ টাকা ৩৫ পয়সা কিলোওয়াটপ্রতি হলেও গ্রাহকের কাছে তা কম দামে বিক্রি করতে গিয়ে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তির লুক্কায়িত খরচ ও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলো পর্যালোচনা করা হলে ব্যয় কমানো সম্ভব।
গ্যাসের দামে লাগামহীন বৃদ্ধি
গ্যাসের খরচ বেড়েছে আমদানিকৃত এলএনজির উচ্চ মূল্যের কারণে।
দেশে এলএনজি আমদানির পর থেকে এ খাতে ১ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে পেট্রোবাংলা গ্যাসের দাম আড়াই গুণ বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠিয়েছে।
শিল্পে গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হলেও আমদানি ব্যয় ৬৫ টাকার ওপরে।
এছাড়া স্থানীয় গ্যাস উত্তোলনের হার বৃদ্ধি না করায় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো যায়নি।
দুর্নীতি ও লুক্কায়িত ব্যয়ের দায়
বিশেষজ্ঞদের মতে, পূর্ববর্তী সরকারগুলোর দুর্নীতি ও লুক্কায়িত ব্যয়ের বোঝা ভোক্তাদের ওপর চাপানো হচ্ছে।
অযাচিত প্রকল্পে অর্থ ব্যয়, বিদেশী ঋণের অতিমূল্যায়িত বিনিয়োগ এবং স্থানীয় সংস্থার দুর্নীতিগ্রস্ত কার্যক্রম বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতকে আর্থিক সংকটে ফেলেছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, এসব খাতের অনিয়ম উদ্ঘাটন এবং ভবিষ্যতে অতিমূল্যায়িত বিনিয়োগ রোধ করা জরুরি।
বর্তমান সরকার পূর্ববর্তী চুক্তি ও প্রকল্পগুলোর পুনর্মূল্যায়ন করলেও ব্যয়ের যৌক্তিকতা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।