২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়।
নিরঙ্কুশ বিজয়ে চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কিন্তু পাঁচ বছর পর রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক অঙ্গনে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে।
বিশেষ করে চীনের ভূমিকা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বদল আসে, যা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে।
নির্বাচনের পর চীনের দ্রুত অভিনন্দন
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিপুল জয় পায় আওয়ামী লীগ।
পরের দিনই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান।
ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত দ্রুতই গণভবনে সেই বার্তা পৌঁছে দেন।
চীনের এ উদ্যোগ দুই দেশের সুসম্পর্কের ইঙ্গিত বহন করলেও পরবর্তী সময়ে বিনিয়োগের ধারাবাহিকতায় পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।
চীনের ঋণ প্রতিশ্রুতি কমে যাওয়া
২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাংলাদেশে অবকাঠামো খাতে উল্লেখযোগ্য চীনা ঋণ প্রতিশ্রুতি দেখা গিয়েছে।
তবে ২০২৩ সালের জুনের পর থেকে নতুন কোনো বড় প্রকল্পে ঋণ চুক্তি হয়নি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকির বিষয়টি চীন আগেই অনুমান করতে পেরেছিল।
ফলে চীন তাদের বিনিয়োগ কৌশলে পরিবর্তন আনে।
দ্বাদশ নির্বাচনের আগে এবং চীন সফর
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর করেন।
তিস্তা প্রকল্প, রোহিঙ্গা সংকট এবং অর্থনৈতিক সংকট সমাধানে ঋণের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো আলোচনায় আসলেও সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা আসেনি।
২১টি সমঝোতা স্বাক্ষর হলেও বড় কোনো ঋণ প্রতিশ্রুতি দেননি চীনা নেতৃত্ব।
চীন ১৪ কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দিলেও মেগা প্রকল্পে বিনিয়োগ এড়িয়ে যায়।
চীনের “ওয়েট অ্যান্ড সি” নীতি
চীনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে বিনিয়োগে সতর্ক নীতি অবলম্বন করতে দেখা যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান মনে করেন, চীন বর্তমানে অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণের নীতি অনুসরণ করছে।
তারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে ধীরে ধীরে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
চীন বড় প্রকল্পে না গিয়ে ব্যক্তি খাত এবং মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক জোরদারে মনোযোগ দিয়েছে।
চীনের বিদ্যমান প্রকল্প ও ভবিষ্যৎ
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, কর্ণফুলী টানেল এবং সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রকল্পে চীনা ঋণের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
তবে এসব প্রকল্পে বিনিয়োগের পর নতুন কোনো প্রকল্পে চীন এগিয়ে আসেনি।
চীনের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমদ মনে করেন, ২০২৩ সালের নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা চীনের বিনিয়োগ সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করেছে।
দেশটির উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক নীতি ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ বাংলাদেশের সরকারের স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
অর্থনৈতিক সংকটের প্রভাব
বাংলাদেশের রিজার্ভ সংকট এবং অর্থনৈতিক সূচকের দুর্বলতাও চীনের বিনিয়োগ থেকে বিরত থাকার কারণ হতে পারে।
চীনের থিংক ট্যাংক এবং অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ধারা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে চীন নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগের চেয়ে পূর্ববর্তী চুক্তিগুলোর বাস্তবায়নে মনোযোগী হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ভবিষ্যৎ নিয়ে চীনের ভূমিকা এবং কৌশল আরও বিশ্লেষণের দাবি রাখে।