বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের বিশেষ কমিটি অস্ত্র ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রস্তাব করেছে।
জনসাধারণের ভিড় নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘ নলযুক্ত আগ্নেয়াস্ত্রের ৫০ শতাংশ ছোট নলযুক্ত অস্ত্র দিয়ে প্রতিস্থাপন করার সুপারিশ করেছে কমিটি।
নতুন ব্যবস্থায় মারাত্মক অস্ত্রের ব্যবহার কমিয়ে হতাহতের ঝুঁকি কমানো হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ছোট নলযুক্ত অস্ত্র কেন প্রয়োজন
পুলিশ সদর দপ্তরের বিশেষ কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছোট নলযুক্ত অস্ত্রের কার্যক্ষমতা মাত্র ৫০ মিটার পর্যন্ত।
অন্যদিকে, দীর্ঘ নলযুক্ত আগ্নেয়াস্ত্র ৪০০ মিটার দূর থেকে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।
দীর্ঘ নলযুক্ত অস্ত্র ব্যবহারের কারণে ভিড় নিয়ন্ত্রণে অনিচ্ছাকৃত হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যায়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জুলাই মাসের গণআন্দোলনে পুলিশের ব্যবহৃত দীর্ঘ নলযুক্ত রাইফেল, ৭.৬২ মিমি পিস্তল এবং শটগানের সীসা বুলেটের কারণে ৮২৬ জন নিহত এবং ১১,৩০৬ জন আহত হন।
মারাত্মক অস্ত্র নিষিদ্ধের প্রস্তাব
কমিটি ৭.৬২ মিমি বুলেট, রিভলভার এবং সীসা বুলেট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছে।
এই অস্ত্রগুলো সহজে পরিচালিত নয় এবং তা প্রায়ই ভুলে গুলি চালানোর কারণ হয়ে দাঁড়ায় বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
প্রস্তাবনায় ৭.৬২ মিমি পিস্তলের পরিবর্তে ৯ মিমি পিস্তল ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে, যেগুলোর কার্যক্ষমতা ১০০ মিটারের পরিবর্তে ২৫ মিটার।
সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত অস্ত্র ভাণ্ডারে জমা দেওয়ার পরিকল্পনার কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
গণআন্দোলনে অস্ত্র ব্যবহারের সমালোচনা
জুলাই মাসের গণআন্দোলনে স্নাইপার রাইফেলের ব্যবহার পুরোপুরি অবৈধ ছিল বলে বিশেষ কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
আন্দোলনের সময় ২০৪ জন নিহতের মধ্যে ৯৫ শতাংশই সরাসরি গুলিবিদ্ধ হন।
তাদের অধিকাংশকে মাথা, বুকে এবং পেটে গুলি করা হয়েছিল।
৪০০ জনের বেশি মানুষ সীসা বুলেটের আঘাতে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, অনেকেই পঙ্গুত্ববরণ করেছেন।
নতুন অস্ত্র এবং প্রশিক্ষণ নীতি
প্রতিটি ৩০ সদস্যের প্লাটুনে প্রধানত নন-লেথাল অস্ত্র সরবরাহ করার সুপারিশ করা হয়েছে।
শুধুমাত্র দুইজন কর্মকর্তা চরম পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য ৯ মিমি পিস্তল বহন করবেন।
পুলিশ ভিড় নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে প্রথমে যোগাযোগের মাধ্যমে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করবে।
অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে জলকামান, টিয়ার গ্যাস এবং স্টান গ্রেনেড ব্যবহার করা হবে।
প্রাণঘাতী অস্ত্র শুধুমাত্র জীবনহানির শঙ্কা থাকলে ব্যবহার করা হবে এবং তাতেও শরীরের নিচের অংশ লক্ষ্যবস্তু করা হবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে বাহিনীর অস্ত্রের ধরন ও পরিমাণ নির্ধারণে নতুন নীতিমালা তৈরি হবে।
নতুন প্রশিক্ষণ নির্দেশিকা উন্নয়নের পরিকল্পনাও রয়েছে কমিটির।