,

দেশের প্রথম পাতাল রেল: চ্যালেঞ্জ, দুর্ভোগ এবং সম্ভাবনা

দেশের প্রথম পাতাল রেল প্রকল্পের নির্মাণকাজ বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত প্রায় ১৯.৮৭২ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ রেলপথ নির্মাণের এই প্রকল্পটি নগরবাসীর কাছে যেমন আশার আলো, তেমনি এর নির্মাণজনিত দুর্ভোগ তাদের জীবনযাত্রাকে স্থবির করে তুলছে।

পরিষেবা স্থানান্তর ও যানজটের ভয়াবহতা

পাতাল রেলের মূল নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার আগে সেবা সংযোগ স্থানান্তর কাজ চলছে।

এ কাজের জন্য প্রগতি সরণি সড়ক এবং এর আশপাশে চরম যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

বিমানবন্দর থেকে প্রগতি সরণি পর্যন্ত যান চলাচলে নিত্যদিন কয়েক ঘণ্টা সময় লাগছে।

ফুটপাতগুলো নির্মাণ সামগ্রীর দখলে চলে যাওয়ায় পথচারীদের চলাচলেও অসুবিধা হচ্ছে।

ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় এ সংকট আরও প্রকট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

কুড়িল থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত বাইপাস সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা থাকলেও, তা বাস্তবায়নে এখনো কোনো অগ্রগতি নেই।

টানেল নির্মাণের ঝুঁকি

পাতাল রেলের টানেল নির্মাণকালে মাটির দেবে যাওয়া এবং ভবন হেলে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার বেশিরভাগ ভবনের কাঠামো দুর্বল হওয়ায় টানেল খননের সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সামছুল হক বলেন, টানেল নির্মাণের সময় পুরো করিডর বন্ধ করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ বৃদ্ধি পাবে এবং এ উন্নয়ন কার্যক্রমকে ‘শ্বেতহস্তী প্রকল্প’ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

সেবা সংস্থাগুলোর অসহযোগিতা

মেট্রোরেলের সেবা সংযোগ স্থানান্তরে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সংস্থাগুলোর অসহযোগিতা প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি কমিয়ে দিচ্ছে।

মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের দাবি, এসব সংস্থা তাদের নির্দেশনা মানছে না।

ট্রাফিক পুলিশের নজরদারি না থাকায় যানবাহনের বেপরোয়া চলাচল এবং নির্মাণসামগ্রী সড়কে ফেলে রাখার মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে।

প্রকল্পের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট লাইন-১ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হলে দুই রুটে দৈনিক প্রায় আট লাখ যাত্রী পরিবহন করা যাবে।

বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পৌঁছাতে সময় লাগবে মাত্র ২৪ মিনিট ৩০ সেকেন্ড।

ছোট যানবাহনের ব্যবহার কমে যাওয়ার পাশাপাশি ঢাকার জনজীবনে একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

তবে ২০৩০ সালের আগে প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

প্রকল্প পরিচালক আবুল কাসেম ভূঁঞা জানান, বহুমুখী চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও তারা ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রস্তুত।

তিনি বলেন, টানেল নির্মাণে অত্যাধুনিক টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) ব্যবহার করা হবে।

অগ্রগতির বর্তমান অবস্থা

প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হয়েছিল ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালে।

মূল নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে।

মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা।

তবে এখন পর্যন্ত সেবা সংযোগ স্থানান্তর কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ও ব্যয় আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আরও পড়তে পারেন