২০২৪ সালে প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেকর্ড ২৬.৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা আগের বছরের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আগস্ট থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট থেকে প্রতি মাসে ২ বিলিয়নের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল ২.৬৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ শতাংশ বেশি।
ব্যাংকার সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, আগের সরকারের সময় অনেক প্রবাসী অর্থ পাঠানো থেকে বিরত ছিলেন।
রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর তারা আবারো রেমিট্যান্স পাঠানো শুরু করেছেন।
হুন্ডি বন্ধ ও বৈধ চ্যানেলের উত্থান
আগের সরকারের সময় অবৈধ হুন্ডি ব্যবস্থার চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছিল।
বিশেষ করে দেশে বড় অঙ্কের অর্থ পাচারের কারণে এই চাহিদা বৃদ্ধি পায়।
রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর হুন্ডির চাহিদা অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থ পাচারের সাথে যুক্ত ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এখন জেলে, পলাতক বা আত্মগোপনে আছেন।
ফলে অবৈধ চ্যানেলের চাহিদা কমে গিয়ে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বৈধ চ্যানেলে প্রবেশ করেছে।
ডলার বিনিময় হারে সংকোচন
বৈধ ও অবৈধ চ্যানেলের ডলার বিনিময় হারে পার্থক্য কমে যাওয়াও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
২০২৩ সালে এই ব্যবধান ছিল ৭ থেকে ১০ টাকা, যা ২০২৪ সালে কমে ৩ থেকে ৫ টাকায় নেমে আসে।
ফলস্বরূপ, প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলে অর্থ পাঠাতে উৎসাহী হয়েছেন।
জাহিদ হোসেন জানান, রপ্তানি আয়ের পুনরায় দেশে ফেরত আসার প্রবণতাও বেড়েছে।
এর ফলে ডলার মজুতে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
রিজার্ভে শ্বাস ফেলার সুযোগ
রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ বৃদ্ধির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।
চলমান আমদানি বিল পরিশোধ সত্ত্বেও রিজার্ভে এই ইতিবাচক পরিবর্তন একটি ভালো লক্ষণ বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর মাসে ইসলামী ব্যাংক সর্বোচ্চ ৩৬৬ মিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স গ্রহণ করেছে।
এরপর রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক ২৬৪ মিলিয়ন, জনতা ব্যাংক ১৪৭ মিলিয়ন, ব্র্যাক ব্যাংক ১৯৩ মিলিয়ন এবং ট্রাস্ট ব্যাংক ১৮৪ মিলিয়ন ডলার।
অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর জানান, বিলম্বিত ঋণপত্রের অর্থ পরিশোধ ২ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে এখন মাত্র ৪০০ মিলিয়নে এসেছে।
এই প্রবণতা রিজার্ভে আরও স্থিতিশীলতা আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।