,

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড: সাদা পাউডার, মৃত কুকুর ও তদন্তের নানা প্রশ্ন

সচিবালয়ে ৭ নম্বর ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরপরই সন্দেহজনক নানা বিষয় সামনে এসেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ভবন থেকে পাওয়া সাদা পাউডার এবং একটি মৃত কুকুর নিয়ে তদন্তে উঠছে নানা প্রশ্ন।

তদন্তের অংশ হিসেবে ফরেনসিক পরীক্ষা এবং সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

সাদা পাউডার নিয়ে তদন্ত

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনের ষষ্ঠ থেকে নবম তলার করিডরে সাদা পাউডার পাওয়া গেছে।

এই পাউডার কি দাহ্য পদার্থ, নাকি এটি সাধারণ চুন (ক্যালসিয়াম অক্সাইড), তা জানতে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এবং সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা চলছে।

তদন্ত কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে এই সাদা পাউডার নিয়ে কয়েকজন সদস্য বিশেষ প্রশ্ন তুলেছেন।

কমিটির সদস্যদের মতে, করিডরে পাউডারের উপস্থিতি অস্বাভাবিক এবং এর প্রকৃতি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

মৃত কুকুর নিয়ে জল্পনা

অগ্নিকাণ্ডের পর ৭ নম্বর ভবনে একটি মৃত কুকুর পাওয়া যায়।

এই কুকুরটি আগুনের আগে ভবনে ছিল নাকি পরে সেখানে প্রবেশ করেছিল, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

তদন্ত কমিটির কয়েকজন সদস্য জানতে চান, কুকুরটি সচিবালয়ের নিজস্ব কোনো পোষা প্রাণী কিনা।

মৃত কুকুরের নমুনাও সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

এটি দুর্ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবে সম্পৃক্ত কিনা, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার ত্রুটি

ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে ফায়ার অ্যালার্ম এবং পানি ছিটানোর নজেল নষ্ট ছিল।

তদন্ত কমিটির বৈঠকে বুয়েটের একজন সদস্য এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

আগুনের সময় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা নজেল এবং অ্যালার্ম সিস্টেম নষ্ট অবস্থায় পান।

তদন্ত কমিটি জানতে চেয়েছে, এগুলো কেন আগে মেরামত করা হয়নি এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ কেন এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

এ ছাড়া, আগুনের ভয়াবহতা কেন এত বেশি ছিল, তা নিয়েও আলোচনা চলছে।

অস্থায়ী পাস এবং নিরাপত্তা প্রশ্ন

২৫ ডিসেম্বর বড়দিনের ছুটির দিনেও অস্থায়ী পাস নিয়ে বেশ কয়েকজন অপরিচিত ব্যক্তি সচিবালয়ে প্রবেশ করেন।

তাঁদের পরিচয় এবং প্রবেশের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

তদন্ত কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে বিশেষভাবে আলোচনা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে অস্থায়ী পাস সংক্রান্ত একটি বিশেষ সেল গঠন করেছে।

সেলটি রাজধানীর আবদুল গণি রোডের ডিএমপি ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে কাজ করবে।

তদন্তের অগ্রগতি

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ওসমান গনিকে।

তদন্ত কমিটির প্রথম বৈঠক হয় শুক্রবার এবং দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় শনিবার।

আজ রোববার তৃতীয় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

কমিটি আগামীকাল প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেবে এবং ১০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।

ক্ষয়ক্ষতি ও অস্থায়ী অফিস

আগুনে পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র, কম্পিউটার এবং আসবাবপত্র পুড়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়গুলোকে আজকের মধ্যে তাদের ক্ষতির তালিকা জমা দিতে বলা হয়েছে।

এই পাঁচ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অস্থায়ী অফিসে তাঁদের কার্যক্রম চালাবেন।

তদন্ত কমিটি ক্ষতিগ্রস্ত অফিসগুলো থেকে কী কী গুরুত্বপূর্ণ নথি হারিয়ে গেছে, তা খতিয়ে দেখছে।

সচিবালয়ের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

অগ্নিকাণ্ডের সময় সচিবালয়ের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটি বিশেষভাবে আগুন লাগার সময় (রাত পৌনে দুইটা) আমলে নিয়েছে।

তদন্তের অংশ হিসেবে প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যও নেওয়া হয়েছে।

তবে কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, এখনো চূড়ান্ত কিছু বলার মতো তথ্য সামনে আসেনি।

আরও পড়তে পারেন