বাংলাদেশ পুলিশ
,

পুলিশের বিকল্প পৃথক তদন্ত সংস্থা গঠনের সুপারিশ বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের

ফৌজদারি মামলার তদন্তের জন্য পুলিশের বিকল্প একটি স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন।

এই সংস্থা পুলিশ বাহিনী থেকে সম্পূর্ণ পৃথক হবে এবং মামলার তদন্তে প্রভাবমুক্ত, দক্ষ এবং নিরপেক্ষ কাঠামো নিশ্চিত করবে বলে দাবি করা হয়েছে।

আইন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব জমা দিয়েছে এই কমিশন।

তদন্ত সংস্থার ভূমিকা ও কাঠামো

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, নতুন এই তদন্ত সংস্থায় পুলিশের কোনো ভূমিকা থাকবে না।

ফৌজদারি মামলার তদন্ত করবে সংস্থার নিয়োজিত বিশেষ প্রশিক্ষিত কর্মকর্তারা।

তদন্ত প্রক্রিয়া তদারকি করবেন সংশ্লিষ্ট অ্যাটর্নি বা প্রসিকিউটর।

তদন্তের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তদন্তকারী কর্মকর্তারা প্রসিকিউটরদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন।

এটি নিশ্চিত করবে যে মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ ও উপস্থাপন প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হবে।

অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের পক্ষপাতমূলক তদন্তের ফলে অনেক নির্দোষ ব্যক্তি ফেঁসে যান এবং প্রকৃত অপরাধীরা ছাড় পেয়ে যান।

পৃথক তদন্ত সংস্থা গঠনের মাধ্যমে এ ধরনের ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে কমিশন।

বর্তমান তদন্ত ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা

কমিশনের মতে, বর্তমানে ফৌজদারি মামলার তদন্ত প্রক্রিয়ায় পুলিশকে কাজে লাগানো হয়।

কিন্তু পুলিশ সদস্যদের অনেকেই প্রভাবিত হয়ে বা অতিরিক্ত দায়িত্বের কারণে তদন্তে সঠিক মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হন।

এ ছাড়া, পক্ষপাতিত্ব এবং দুর্নীতির অভিযোগ প্রায়ই উঠে আসে।

এর ফলে অনেক সময় মামলার সুষ্ঠু নিষ্পত্তি হয় না।

বিচার বিভাগের এই প্রস্তাব বলছে, তদন্ত প্রক্রিয়ায় দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।

আইনজীবী ও বিশেষজ্ঞদের মতামত

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেছেন, পৃথক তদন্ত সংস্থা গঠনের উদ্যোগ যুগোপযোগী।

তাঁর মতে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা একটি বাহিনীর ওপর তদন্তের দায়িত্ব দিলে পক্ষপাতের আশঙ্কা থাকে।

তিনি আরও বলেন, পৃথক সংস্থা গঠনের পাশাপাশি সততা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যদি কোনো তদন্ত কর্মকর্তা প্রভাবিত হয়ে দুর্বল প্রতিবেদন দেন, তবে তাঁকে ফৌজদারি শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

এমনকি সংক্ষিপ্ত বিচারের মাধ্যমে তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।

তদন্ত সংস্থার আন্তর্জাতিক দৃষ্টান্ত

বিশ্বের অনেক দেশেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাইরে পৃথক তদন্ত সংস্থা কাজ করে।

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন বলেছেন, বাংলাদেশের মতো একটি দেশে এই ধরনের সংস্থা গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি।

তিনি বলেন, সুষ্ঠু তদন্ত একটি মামলার বিচার প্রক্রিয়ার মূল ভিত্তি।

তদন্তের মান নিম্নমানের হলে বিচারও যথাযথভাবে সম্পন্ন হয় না।

তাঁর মতে, একটি পৃথক তদন্ত সংস্থা গঠনের মাধ্যমে তদন্তে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা সম্ভব হবে।

পুলিশের প্রতিক্রিয়া

এই প্রস্তাব নিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এমন প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে পুলিশের কাজের ভার কিছুটা হালকা হবে।

তাঁদের মতে, তদন্ত প্রক্রিয়ার ভার পুলিশের কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া হলে পুলিশের পেশাগত দক্ষতা আরও বাড়বে।

অন্যদিকে, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদ বলেন, তদন্তকারী সংস্থা যতই আলাদা হোক, যদি প্রভাবমুক্তভাবে কাজ করার সুযোগ না দেওয়া হয়, তবে তাতে কোনো লাভ হবে না।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক এবং রাষ্ট্রীয় প্রভাবমুক্ত রেখে তদন্ত কর্মকর্তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে।

প্রস্তাবিত সংস্থার প্রত্যাশা

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন মনে করে, প্রস্তাবিত পৃথক তদন্ত সংস্থা বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা বাড়াবে।

পুলিশের সঙ্গে তদন্ত সংস্থার কাজের সুনির্দিষ্ট বিভাজন ঘটিয়ে তদন্তে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব হবে।

প্রস্তাবে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে তদন্ত প্রক্রিয়ার মান বৃদ্ধির মাধ্যমে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যাবে।

এটি নির্দোষ ব্যক্তিদের হয়রানি রোধেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

আরও পড়তে পারেন