,

ভারতীয় ঋণের প্রকল্পে অচলাবস্থা: বাংলাদেশ রেলওয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

বাংলাদেশ রেলওয়ের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে ভারতের লাইন অব ক্রেডিট (এলওসি) অর্থায়ন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।

দীর্ঘসূত্রিতার কারণে তিনটি প্রকল্প শুরুই হয়নি। একটি প্রকল্পের কাজ পাঁচবার মেয়াদ বাড়িয়েও শেষ করা যায়নি। আরেকটি প্রকল্পের ক্ষেত্রে রেল কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নের কথা ভাবছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপোড়েন এবং অর্থছাড়ে দীর্ঘসূত্রিতা এসব প্রকল্পকে ব্যাহত করছে।

ভারতীয় ঋণে রেলের প্রকল্পের চিত্র

বাংলাদেশ রেলওয়ে ভারতের এলওসি ঋণে ছয়টি প্রকল্প হাতে নেয়।

এর মধ্যে গত ১০ বছরে আলোর মুখ দেখেছে শুধু খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্প।

অন্যদিকে, দিনাজপুরের পার্বতীপুর থেকে রংপুরের কাউনিয়া রেলপথ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শুরু হয়নি।

প্রকল্পটির সার্বিক অগ্রগতি মাত্র শূন্য দশমিক ৯০ শতাংশ।

খুলনা-দর্শনা রেলপথ প্রকল্পে কাজের অগ্রগতি মাত্র ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ প্রকল্পে অগ্রগতি হয়েছে ১৭ দশমিক ১০ শতাংশ।

ঢাকা-টঙ্গী ডাবল লাইন এবং কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ প্রকল্পে কিছু কাজ চললেও তা যথেষ্ট ধীরগতিতে।

অর্থছাড়ে দীর্ঘসূত্রিতা

বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েলগেজ রেলপথ প্রকল্প শুরু হয় ২০১৮ সালের আগস্টে।

প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হলেও কাজ শুরু হয়নি।

এ প্রকল্পে অর্থছাড়ের জন্য ভারতের এক্সিম ব্যাংকে পাঁচটি চিঠি পাঠানো হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

শর্ত অনুযায়ী এক্সিম ব্যাংক ঠিকাদারদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা পাঠাবে, যার ভিত্তিতে বাংলাদেশ দরপত্র আহ্বান করবে।

কিন্তু এক্সিম ব্যাংকের দিক থেকে এখনো কোনো তালিকা আসেনি।

প্রকল্প পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম ফিরোজী বলেন, “যেকোনো কিছুতে ভারতের সম্মতি চেয়ে চিঠি দিলে সময়মতো জবাব আসে না।”

ঢিমেতালে চলছে কুলাউড়া-শাহবাজপুর প্রকল্প

কুলাউড়া-শাহবাজপুর ৫২ কিলোমিটার রেললাইন পুনর্নির্মাণ প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ৫১ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

৬৭৮ কোটি টাকার এ প্রকল্পে ভারতীয় ঋণের পরিমাণ ৫৫৬ কোটি টাকা।

কাজের ধীরগতির কারণে পঞ্চমবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

গত আগস্টে ভারতে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আটকা পড়ায় কাজ প্রায় থমকে যায়।

সরকারি অর্থায়নে সাময়িকভাবে কাজ চালানো হলেও প্রকল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত।

ঢাকা-টঙ্গী ডাবল লাইনের অগ্রগতি

ঢাকা-টঙ্গী ডাবল লাইন প্রকল্পটি রেলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প।

২০১২ সালে অনুমোদিত প্রকল্পটির অগ্রগতি মাত্র ৩৭ শতাংশ।

এ প্রকল্পে ভারতীয় ঋণ ধরা হয়েছে ২ হাজার ৮২১ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশের অংশ ৫২১ কোটি টাকা।

ভারতের হাইকমিশন থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, প্রকল্পটিতে ভারত অর্থায়ন নাও করতে পারে।

ডলারের মূল্যবৃদ্ধি এবং নতুন এলওসি নীতিমালার শর্ত নিয়ে বিতর্ক প্রকল্পটিকে আরও জটিল করেছে।

রেলের স্টিয়ারিং কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ভারত সাড়া না দিলে প্রকল্পটি অন্য কোনো বিদেশি সাহায্য বা নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা হবে।

বিকল্প চিন্তায় রেল কর্তৃপক্ষ

বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য জাপান আগ্রহ দেখিয়েছে।

রেলওয়ে জাপানের কাছে নতুন পরিকল্পনা পাঠিয়েছে।

রেলের মহাপরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, “বগুড়া-সিরাজগঞ্জ প্রকল্পটি জরুরি, এবং এটি জাপানের অর্থায়নে করার চেষ্টা চলছে।”

তিনি আরও জানান, প্রকল্পগুলো নিয়ে ভারত সাড়া না দিলে বিকল্প পথেই এগোতে হবে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানান, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে বৈঠকে প্রকল্পগুলো নিয়ে আলোচনা হবে।

তবে উপদেষ্টা মনে করেন, এলওসি থেকে বের হয়ে নতুন অর্থায়নের মাধ্যমে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা সহজ হবে না।

রেল কর্তৃপক্ষের মতে, সময়মতো সিদ্ধান্ত না নিলে প্রকল্পগুলো আরও পিছিয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।

আরও পড়তে পারেন