বাংলাদেশে গণআন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া দল আওয়ামী লীগ আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তা নিয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ.ফ.ম. বাহাউদ্দিন নাছিম জানিয়েছেন, উপযুক্ত পরিবেশ থাকলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য তারা প্রস্তুত।
অন্যদিকে, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রমকে তারা বৈধতা দিচ্ছেন না।
বাহাউদ্দিন নাছিম বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে আমাদের লক্ষ্য, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা।”
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি সবসময়ই রয়েছে এবং তারা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনে অংশ নিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
তবে আব্দুর রহমান ভিন্ন সুরে বলেন, “এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই অংশ নেওয়ার বিষয়ে আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্তে আসিনি। আমাদের দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বিষয়টি চূড়ান্ত করবেন।”
তিনি আরও বলেন, “আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা দিলে সেই নির্বাচন কখনো গ্রহণযোগ্য হবে না। এটি জনগণ কিংবা আন্তর্জাতিক মহল মেনে নেবে না।”
আত্মগোপনে আওয়ামী লীগ নেতারা
টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ এখন কঠিন পরিস্থিতির মুখে।
গণআন্দোলনের মুখে দলটির নেতারা আত্মগোপনে আছেন।
দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে অবস্থান করছেন।
গোপালগঞ্জ, যা আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত, সেখানেও দলটির কোনো নেতা প্রকাশ্যে নেই।
তৃণমূলের নেতারাও ভবিষ্যৎ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নন।
বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “আমরা এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার অপেক্ষায় আছি। মামলা, হামলা এবং নির্যাতনের কারণে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।”
তিনি জানান, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এমনকি ঘরে থাকলেও হামলার শিকার হচ্ছেন।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে বিতর্ক
আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে দেশজুড়ে চলছে তুমুল আলোচনা।
ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা নতুন শক্তি বলছে, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেওয়া উচিত নয়।
আওয়ামী লীগের নেতা আব্দুর রহমান প্রশ্ন তুলেছেন, “আমাদের নিয়ে এত ভীতি কেন? জনগণই ঠিক করবে, কোন দল থাকবে আর কোন দল থাকবে না।”
তিনি আরও বলেন, “যারা আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা দিচ্ছে, তারা আসলে নিজেরাই অনির্বাচিত নেতৃত্ব চায়।”
বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে জনগণ যাকে চাইবে, আওয়ামী লীগ সেটি মেনে নেবে।”
তিনি আরও জানান, “আমরা অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে সঠিক পথে এগিয়ে যেতে চাই।”
নেতৃত্ব সংকট ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
আওয়ামী লীগের বর্তমান সংকটের মূল কারণ হিসেবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দলটির ওপর আরোপিত ‘স্বৈরাচার’ ও ‘ফ্যাসিস্ট’ তকমাকে দেখছেন।
গণহত্যার অভিযোগ এবং দুর্নীতি নিয়ে সমালোচনার মুখে থাকা দলটির শীর্ষ নেতৃত্বে স্থবিরতা বিরাজ করছে।
বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, “আমরা জনগণের সঙ্গে থেকে রাজনীতিতে ফিরতে চাই। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা সৎ সাহস নিয়ে জনগণের রায় মেনে নেব এবং দেশের তরুণ প্রজন্মকে সঙ্গে নিয়ে গণআন্দোলনের মাধ্যমে সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করব।”