,

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড: ছয় ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে, তদন্তের নির্দেশ

বাংলাদেশ সরকারের সচিবালয়ে সাত নম্বর ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, বুধবার দিবাগত রাত পৌনে দুইটায় তারা আগুন লাগার খবর পায়।

দমকল বাহিনীর শুরুতে আটটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করলেও, পরে মোট ১৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়।

তবে স্থান স্বল্পতার কারণে একসঙ্গে ১০টি ইউনিট কাজ করতে পেরেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহেদ কামাল।

আগুন ভবনের ছয় থেকে নয় তলা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।

তবে বৃহস্পতিবার সকাল আটটার পর আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনার ঘোষণা দেওয়া হয়।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের সহায়তায় উদ্ধার কাজ অব্যাহত রয়েছে।

ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখনো নির্ধারণ করা যায়নি।

একজন কর্মীর মৃত্যু, কোনো আহতের খবর নেই

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একজন ফায়ার সার্ভিস কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।

মৃত ফায়ার সার্ভিস কর্মীর নাম সোহানুর জামান নয়ন।

ফায়ার সার্ভিস জানায়, পানির পাম্প থেকে লাইনের সংযোগ স্থাপনের সময় দ্রুতগামী একটি ট্রাক নয়নকে চাপা দেয়।

তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

রংপুরের মিঠাপুকুর এলাকার নয়ন ২০২২ সালে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক জানান, দুর্ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক।

তবে অগ্নিকাণ্ডে আর কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

রাতের বেলা হওয়ায় ভবনে কেউ উপস্থিত ছিলেন না বলে কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন।

বিবিসি সরেজমিনে যা দেখেছে

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ছয়টায় বিবিসি সংবাদদাতা ঘটনাস্থলে গিয়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী বের হতে দেখেন।

ভবনের জানালাগুলো দিয়ে তখনো কালো ধোঁয়া গলগল করে বের হচ্ছিল।

দমকল বাহিনীর কর্মীরা আগুন নেভাতে ব্যস্ত ছিলেন।

দুটি বড় ল্যাডার দিয়ে ভবনের ওপরের তলাগুলোতে পানি ছিটানো হচ্ছিল।

সচিবালয়ের চারপাশে বিপুল সংখ্যক মানুষের ভিড় দেখা যায়।

অনেক কর্মচারী কাজে যোগ দিতে এসে প্রধান ফটক বন্ধ পেয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি।

সচিবালয় সংলগ্ন সড়কটি নিরাপত্তার জন্য আটকে দেওয়া হয়।

সেনাবাহিনী, বিজিবি, এবং পুলিশ সদস্যদেরও ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়।

আগুন নেভাতে ছয় ঘণ্টা লাগার কারণ কী?

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহেদ কামাল জানিয়েছেন, ভবনের ভেতরে কক্ষগুলো বন্ধ থাকায় গ্লাস ও দরজা ভেঙে পানি দিতে হয়েছে।

ভবনের অভ্যন্তরীণ সজ্জার কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ন্ত্রণে সময় লাগে।

জাহেদ কামাল জানান, তাদের মূল লক্ষ্য ছিল আগুন যেন ছয় তলার নিচে নেমে না আসে।

পানির সংকট ছিল না বলে তিনি নিশ্চিত করেন।

সাত নম্বর ভবন ছাড়া অন্য কোনো ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।

তদন্ত এবং উপদেষ্টাদের প্রতিক্রিয়া

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “নাশকতার আশঙ্কা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।”

স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ফেসবুকে অভিযোগ করেন, এটি সরকারকে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্র হতে পারে।

তিনি জানান, তার মন্ত্রণালয় সাম্প্রতিক দুর্নীতির তদন্তে অগ্রসর হচ্ছিল।

সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের কেউ কেউ এই ঘটনায় সঠিক তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

কর্মকর্তাদের একাংশ মনে করেন, শর্ট সার্কিট নাকি ষড়যন্ত্র – তা স্পষ্ট হওয়া জরুরি।

আরও পড়তে পারেন