নির্বাচন কমিশন (ইসি)
,

জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা আবারও পাচ্ছে ইসি

জাতীয় সংসদ নির্বাচন তফশিল ঘোষণার পর যে কোনো পর্যায়ে তা বাতিলের ক্ষমতা আবারও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হাতে ফিরতে যাচ্ছে।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সুপারিশ করেছে, তফশিল ঘোষণার পর থেকে ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত যেকোনো সময় বিরূপ পরিস্থিতি তৈরি হলে ইসি পুরো নির্বাচন বাতিল করতে পারবে।

এজন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯১(এ) উপধারা সংশোধনের প্রস্তাব নিয়ে একমত হয়েছেন কমিশনের সদস্যরা।

কমিশন প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ইসির এ ক্ষমতা থাকা প্রয়োজন। ক্ষমতা কমানোর সময় আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম।

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ৯১(এ) উপধারায় পরিবর্তন এনে শুধু ভোটের দিন অনিয়মিত কেন্দ্র বন্ধের বিধান রাখে।

তবে নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সদস্যরা মনে করেন, পুরো নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা পুনর্বহাল হওয়া উচিত। প্রয়োজনে এর প্রয়োগ সুনির্দিষ্ট করা যেতে পারে।

হলফনামায় তথ্য গোপন করলে প্রার্থিতা বাতিল

প্রার্থীদের হলফনামায় তথ্য গোপন বা অসত্য তথ্য দিলে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতা পাচ্ছে ইসি।

বর্তমানে প্রার্থীর সাত ধরনের তথ্য হলফনামায় জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তা যাচাই করে না।

সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, তথ্য যাচাইয়ের সময় বাড়ানো হবে।

এছাড়া তথ্য গোপন করলে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরও প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবে ইসি।

উদাহরণস্বরূপ, মাদারীপুর-৩ আসনের সাংসদ আব্দুস সোবহান গোলাপ যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বাড়ির তথ্য গোপন করেন।

এ বিষয়ে সংস্কার কমিশনের সদস্যরা একমত হয়েছেন, সম্পদ লুকানোর প্রবণতা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

নির্বাচন সীমানা পুনর্নির্ধারণে বড় পরিবর্তন

সংস্কার কমিশন নির্বাচন সীমানা পুনর্নির্ধারণ আইনেও পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে।

প্রস্তাব অনুযায়ী, সীমানা নির্ধারণে ইসির কর্মকর্তাদের পাশাপাশি ভূগোলবিদ ও পরিসংখ্যানবিদদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

এক আসনের সঙ্গে অন্য আসনের জনসংখ্যার ব্যবধান ১০ শতাংশের মধ্যে রাখতে হবে।

এতে শহরাঞ্চলে আসন সংখ্যা বাড়বে, তবে জনসংখ্যা কম থাকা এলাকায় আসন কমবে।

পার্বত্য অঞ্চলের আসন সংখ্যা অপরিবর্তিত রাখার সুপারিশ থাকবে।

প্রবাসীদের ভোটাধিকার সহজীকরণ

প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করতে সংস্কার কমিশন পোস্টাল ব্যালট সহজ করার প্রস্তাব করেছে।

এই প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে নির্বাচন ব্যবস্থায় আধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষ জনবল নিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে।

‘না ভোট’ এবং ইভিএম বন্ধের সুপারিশ

নির্বাচনে ‘না ভোট’ ফেরানোর প্রস্তাব করছে কমিশন।

এতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথ বন্ধ হবে।

এছাড়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারে বিরোধিতা করা হয়েছে।

ড. বদিউল আলম জানিয়েছেন, ইভিএম ব্যবহারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের প্রস্তাব করা হবে।

নির্বাচন কমিশন নিয়োগে পরিবর্তনের প্রস্তাব

নির্বাচন কমিশন গঠনে বিদ্যমান আইন বাতিল করে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন আইন প্রণয়ন করা হবে।

প্রতিটি প্রস্তাব দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক করতে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আরও পড়তে পারেন