,

যশোরের মাদ্রাসা ভিডিও নিয়ে বিতর্ক: কী ঘটেছিল এবং কেন এই আলোচনার সূত্রপাত?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ঘিরে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

ভিডিওতে তিনজন ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে, যাদের মধ্যে দু’জনের মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা এবং আরেকজনের মুখ সাদা কাপড়ে ঢাকা।

কালো কাপড়ে ঢাকাদের হাতে অস্ত্রসদৃশ বস্তু দেখা গিয়েছে।

সাদা কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকা ব্যক্তিকে আরবিতে বক্তব্য দিতে শোনা গিয়েছে।

ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে বুধবার রাতে এবং এরপর থেকেই এটি সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদদের প্রোফাইলেও শেয়ার হয়েছে।

ভিডিওটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এর প্রাসঙ্গিকতা ও উদ্দেশ্য নিয়ে।

স্থানীয় পুলিশ ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এটি একটি বার্ষিক অনুষ্ঠানের অংশ ছিল।

ভিডিওর পেছনের আসল ঘটনা কী?

যশোর শহরের কওমি মাদ্রাসা জামিয়া ইসলামিয়া ওই বিতর্কিত ভিডিওর কেন্দ্রবিন্দুতে।

১৭ই ডিসেম্বর মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে একটি বার্ষিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।

অনুষ্ঠানের একটি পর্ব ছিল ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’, যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ইচ্ছামতো সেজেছিল।

পুলিশ জানিয়েছে, ভিডিওতে দেখা তিনজন শিক্ষার্থী ফিলিস্তিনের মুক্তি সংগ্রামের পরিস্থিতি উপস্থাপন করতে চেয়েছিল।

যশোর জেলার পুলিশ সুপার জিয়া উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ডে কোনো অপরাধমূলক উদ্দেশ্য ছিল না। তিনি বলেন, “এটি ছিল শিক্ষার্থীদের কল্পনাপ্রসূত একটি পরিবেশনা, যা ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।”

ভিডিওতে দেখা অস্ত্র আসল নয়, বরং কাঠ ও শোলা দিয়ে তৈরি নকল বস্তু ছিল। মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মুফতি লুৎফুর রহমান ফারুকী বলেছেন, “শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করতে চেয়েছিল।”

জঙ্গিবাদের সঙ্গে মিল এবং সামাজিক প্রতিক্রিয়া

ভিডিওটি দেখে অনেকেই বাংলাদেশে অতীতের জঙ্গি কর্মকাণ্ডের স্মৃতি মনে করেছেন।

২০১৬ সালের গুলশানের হলি আর্টিজান হামলার ভিডিওতে হামলাকারীদের কালো পোশাকে দেখা গিয়েছিল।

এ কারণেই অনেকে যশোরের ভিডিওটি জঙ্গি কার্যকলাপের প্রতীক হিসেবে দেখে আতঙ্ক প্রকাশ করেছেন।

ফেসবুকে এই বিষয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে মন্তব্য করেছেন যে, এটি দেশের জন্য একটি বিপজ্জনক ইঙ্গিত।

তবে কেউ কেউ ঘটনাটিকে ‘শিশুসুলভ’ কল্পনাপ্রসূত কর্মকাণ্ড হিসেবে দেখছেন।

সজীব ওয়াজেদ জয় এই ভিডিও নিয়ে একটি পোস্টে বলেছেন, “অস্ত্র প্রদর্শন এবং প্রকাশ্যে বক্তব্য দেওয়ার এমন ঘটনা আইএস-সমর্থিত কর্মকাণ্ডের আদলে সাজানো।”

তবে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় পুলিশ দাবি করেছে, এটি জঙ্গি কার্যকলাপ নয়। তাদের মতে, এটি একটি নির্দোষ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার ভুল ব্যাখ্যা।

সামাজিক মনস্তত্ত্ব ও শিশুদের প্রভাব

সমাজবিজ্ঞানী ড. সাদেকা হালিম বলেছেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ড শিশুদের মানসিক বিকাশে প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি মনে করেন, শিশুদের এই ধরনের সাজসজ্জা ও প্রতীক ব্যবহার থেকে বিরত রাখা উচিত।

তবে তার মতে, সমাজে দীর্ঘদিন ধরেই এই ধরনের কর্মকাণ্ডের প্রভাব রয়েছে।

ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে শিশুদের ওপর এই ধরনের বিষয়গুলো সহজেই প্রভাব ফেলে।

মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দাবি সত্ত্বেও এই ভিডিও বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি বিতর্কিত অধ্যায় হিসেবে থেকে যাবে।

আরও পড়তে পারেন