স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সমন্বয়হীনতার কারণে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে নেওয়া প্রায় ৯৪ কোটি ডলারের ঋণের মধ্যে অব্যবহৃত ১৮ কোটি ডলার দুই বছর ধরে ইউনিসেফের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পড়ে রয়েছে।
ডলার সংকটে থাকা বাংলাদেশ এই অর্থ ফেরত আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিষয়টি স্বীকার করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে একাধিকবার নির্দেশ দিলেও এখন পর্যন্ত অর্থ ফেরত আনার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি এবং অর্থ ফেরতের নির্দেশ
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অর্থ ফেরত আনতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
২০২১ সালে এডিবির সঙ্গে চুক্তির আওতায় ইউনিসেফের মাধ্যমে করোনা টিকা কেনার জন্য এই অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল।
তবে টিকা কেনার প্রয়োজন কমে যাওয়ায় ইউনিসেফের অ্যাকাউন্টে ১৮ কোটি ডলার অব্যবহৃত থেকে যায়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, অর্থ ফেরত আনতে আগেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মনিরা পারভীনের স্বাক্ষরিত চিঠিতে অব্যবহৃত অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার ওপর জোর দেওয়া হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, এ অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।
ইউনিসেফের সঙ্গে চুক্তি এবং টিকার অতিরিক্ত সরবরাহ
২০২২ সালে বিভিন্ন উৎস থেকে বিনামূল্যে টিকা পাওয়ায় ইউনিসেফের সঙ্গে সম্পন্ন চুক্তির পুরো অর্থ খরচ করা হয়নি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রোগ্রাম পরিচালক ডা. মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশ থেকে টিকার অতিরিক্ত সরবরাহ আসায় ইউনিসেফ থেকে টিকা কেনার প্রয়োজন কমে যায়।
চুক্তির আওতায় কিছু টিকা কেনা হলেও, অবশিষ্ট অর্থ ইউনিসেফের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে থেকে যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, অব্যবহৃত অর্থ দিয়ে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) এর অধীনে টিকা কেনার পরিকল্পনা রয়েছে।
তবে এ বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
ডলার সংকট এবং দায়িত্বহীনতার অভিযোগ
অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকেই বাংলাদেশ তীব্র ডলার সংকটে পড়ে।
ডলার সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে কঠিন শর্তে ঋণ নেয়।
তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের গাফিলতির কারণে ১৮ কোটি ডলার দুই বছর ধরে ইউনিসেফের অ্যাকাউন্টে পড়ে রয়েছে।
কর্তৃপক্ষ অর্থ ফেরত আনতে উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য খাতে নতুন অপারেশনাল প্ল্যান পাস না হওয়ায় অর্থ সংকট রয়েছে।
অধ্যাপক জাফর বলেন, নতুন পরিকল্পনার অধীনে ইপিআই টিকা কেনার জন্য ইউনিসেফের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
করোনা মহামারির সময় কেনাকাটায় অনিয়ম
করোনা মহামারির সময় টিকা ও চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনাকাটায় বিপুল অনিয়ম ধরা পড়েছে।
বাংলাদেশ কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) কার্যালয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
২০২০ সালের জুনের আগে জরুরিভিত্তিতে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সুরক্ষা সামগ্রী কেনায় ব্যাপক অনিয়ম হয়।
পরে বিদেশি প্রকল্পে সরঞ্জাম কেনাকাটায় আরও অনিয়ম ধরা পড়ে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের কারণে এই অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।