, ,

বগুড়া কারাগারে এক মাসে চার আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যু

বগুড়া কারাগারে এক মাসে চারজন আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

এই নেতারা হত্যাকাণ্ড ও নাশকতার মামলায় আটক ছিলেন।

কারা কর্তৃপক্ষ তাদের স্বাভাবিক মৃত্যু বলে দাবি করলেও, আওয়ামী লীগ এটিকে “পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড” বলছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, হেফাজতে থাকা ব্যক্তির মৃত্যুর দায় পুরোপুরি রাষ্ট্রের।

গত ১১ই নভেম্বর থেকে ১১ই ডিসেম্বর পর্যন্ত এ চারটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

সর্বশেষ সোমবার গাবতলীর দুর্গাহাটা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মিঠু মারা যান।

এর আগে শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ, বগুড়া পৌরসভার সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম রতন এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদত আলম ঝুনুর মৃত্যু হয়।

পরিবারের সদস্যরা দাবি করছেন, আটক থাকা অবস্থায় তাদের ওপর কোনো ধরনের নির্যাতন বা অবহেলা করা হয়েছে কিনা, তা তদন্ত হওয়া উচিত।

কারাগারে অসুস্থতা নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড?

কারা কর্তৃপক্ষের দাবি, মৃত্যুর কারণ “স্বাভাবিক”।

বগুড়া জেলা কারাগারের সুপার ফারুক আহমেদ জানান, চারজনই কারাগারে আসার আগে থেকেই বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন।

তাদের মধ্যে কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত ছিলেন, কেউ ডায়াবেটিসে ভুগছিলেন।

তিনি বলেন, “কারাগারে অসুস্থ হওয়ার পর আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের হাসপাতালে নিয়েছি। কোনো অবহেলা করা হয়নি।”

তবে নিহত শাহাদত আলম ঝুনুর পরিবার কারা কর্তৃপক্ষের দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে।

ঝুনুর ছেলে রিয়াদ উল আলম বলেন, তার বাবা কারাগারে অসুস্থ ছিলেন এমন কোনো তথ্য তাদের জানা নেই।

তিনি বলেন, “আমার বাবা কারাগারে যাওয়ার আগে সুস্থ ছিলেন। সাক্ষাৎ করতে গিয়ে আমরা তাকে ভালো অবস্থায় পেয়েছি।”

আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “ঝুনু একজন সজ্জন ব্যক্তি ছিলেন। কারাগারে নিয়ে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।”

তিনি আরও দাবি করেন, “কারাগারে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নিয়মিত প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছেন।”

মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগ

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) কারাগারে এ ধরনের মৃত্যুকে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা হিসেবে উল্লেখ করেছে।

সংস্থার চেয়ারম্যান জেড আই খান পান্না বলেন, “যে কোনো আটক ব্যক্তির মৃত্যু হলে তার দায় রাষ্ট্রের।”

তিনি বলেন, “যদি তারা গুরুতর অসুস্থ থাকেন, তবে তাদের আগে থেকেই হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া উচিত। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে কি তা করা হয়েছে?”

আসকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত কারাগারে আটক অবস্থায় ৬২ জনের মৃত্যু হয়েছে।

তাদের মধ্যে ৩৯ জন বিচারাধীন বন্দি এবং ২৩ জন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি ছিলেন।

পান্না বলেন, “এ ধরনের মৃত্যু মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহি করতে হবে।”

রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপট

বগুড়ার এসব নেতার মৃত্যুর ঘটনা এমন সময় ঘটছে, যখন দেশজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে।

৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে।

নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত দলটির প্রধান শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেই আড়াইশোর বেশি মামলা হয়েছে।

বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নাশকতা, হত্যাকাণ্ড ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে কারাগারে নেতাকর্মীদের মৃত্যু রাজনৈতিক বিতর্ক আরও জোরালো করেছে।

আওয়ামী লীগ দাবি করেছে, বিরোধী পক্ষ প্রতিহিংসা থেকে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে।

তবে সরকারপক্ষ ও কারা কর্তৃপক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করে মৃত্যুগুলোকে “স্বাভাবিক” বলে উল্লেখ করেছে।

আরও পড়তে পারেন