সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদের পতনের পর মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতা বাড়ছে।
গতকাল রোববার বিদ্রোহীরা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ঘোষণা করেছেন যে তাঁরা সিরিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল–আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করেছেন।
এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে দেশটির ৫০ বছরের পারিবারিক শাসনের অবসান ঘটেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদ্রোহীদের দ্রুত গতির অভিযানের ফলে এই অঞ্চলে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি হবে।
মধ্যপ্রাচ্য এমনিতেই যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা। সিরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি এই অঞ্চলের নিরাপত্তার ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে।
বিশ্ববাজারে এই রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা জ্বালানি তেলের দামের ওপর প্রভাব ফেলেছে।
ব্রেন্ট ও ডব্লিউটিআই তেলের দামে ঊর্ধ্বগতি
বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে।
রয়টার্স জানায়, ব্রেন্ট ধরনের অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে ৩৬ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৫১ শতাংশ।
এতে ব্যারেলপ্রতি ব্রেন্ট তেলের দাম দাঁড়িয়েছে ৭১ ডলার ৪৮ সেন্টে।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) তেলের দাম বেড়েছে ৩৮ সেন্ট বা শূন্য দশমিক ৫৭ শতাংশ।
ডব্লিউটিআই তেলের বর্তমান দাম ব্যারেলপ্রতি ৬৭ ডলার ৫৮ সেন্ট।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সিরিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা তেলের বাজারে এই সাময়িক ঊর্ধ্বগতির কারণ।
সৌদি আরবের দাম কমানো ও চীনের চাহিদার প্রভাব
তেলের চাহিদা ও বাজারের গতিশীলতা নিয়ে নানা পূর্বাভাস রয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল রপ্তানিকারক কোম্পানি সৌদি আরামকো এশিয়ার ক্রেতাদের জন্য আগামী মাসে সরবরাহ করা তেলের দাম কমিয়েছে।
২০২১ সালের শুরুর দিক থেকে এ পর্যন্ত সৌদি আরামকো এত বড় পরিমাণে দাম কমায়নি।
চীনে তেলের চাহিদা অনেকটাই কমে যাওয়ায় এই পদক্ষেপ নিয়েছে সৌদি আরামকো।
বিশ্বের বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ চীনে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ধীরগতির কারণে তেলের চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে।
অন্যদিকে, ওপেক প্লাস তেলের উৎপাদন বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা আরও তিন মাস পিছিয়ে দিয়েছে।
জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী বছরের এপ্রিলের আগে তেলের উৎপাদন বাড়ানো হবে না।
বিশ্বের তেল উৎপাদনের অর্ধেক আসে এই ওপেক প্লাস দেশগুলো থেকে।
বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টি নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের দিকে
বিশ্ববাজারে বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জ্বালানি নীতি ও মধ্যপ্রাচ্য কৌশলের দিকে নজর রাখছেন।
মিতসুবিশি ইউএফজে রিসার্চ অ্যান্ড কনসালটিংয়ের অর্থনীতিবিদ তোমোমিচি আকুতা বলেছেন, সিরিয়ার ঘটনাবলি মধ্যপ্রাচ্যের অনিশ্চয়তায় নতুন একটি স্তর যোগ করেছে।
তবে চীনের দুর্বল চাহিদা এবং সৌদি আরবের তেলের দাম কমানোর ফলে তেলের বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন হয়নি।
বিনিয়োগকারীরা ট্রাম্প প্রশাসনের জ্বালানি নীতি থেকে কী বার্তা পাওয়া যায়, সেটি বিশ্লেষণ করছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, আগামী কয়েক মাসে তেলের বাজারে অস্থিরতা অব্যাহত থাকতে পারে।