বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে কূটনৈতিক সম্পর্কের টানাপোড়েন তীব্র আকার ধারণ করেছে।
উত্তেজনার শুরু হয় বাংলাদেশ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দেওয়ার পর থেকে।
এই ঘটনার পর থেকেই ভারতীয় রাজনীতিবিদদের মধ্যে বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্যের প্রবণতা লক্ষ করা যায়।
ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতারা প্রকাশ্যে বাংলাদেশ নিয়ে মন্তব্য করতে থাকেন।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাতিসংঘের মাধ্যমে বাংলাদেশে শান্তিরক্ষী পাঠানোর প্রস্তাব দেন।
মমতার এই বক্তব্য বাংলাদেশে ব্যাপক আলোড়ন তোলে এবং সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার মুখে পড়ে।
ত্রিপুরায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনা দুই দেশের উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
এই হামলার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো একত্র হয়ে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেয়।
বাংলাদেশ সরকার অভিযোগ তোলে যে ভারতের গণমাধ্যমে দেশবিরোধী প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
ভারতের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হলেও দুই দেশের সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে ওঠে।
রাজনৈতিক দলের অবস্থান
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভারতবিরোধী মনোভাব নতুন কিছু নয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে এ মনোভাব আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামী ভারতের ভূমিকার সমালোচনা করে আসছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ভারতের উচিত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধ করা।
তিনি আরও বলেন, ভারতের গণমাধ্যম বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছে যা দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষতি করছে।
জামায়াতে ইসলামী মনে করে, ভারতের এই প্রচারণা দুই দেশের মধ্যে আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে।
আওয়ামী লীগের নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ভারতের গণমাধ্যমে যে অভিযোগগুলো উঠছে, তা ভিত্তিহীন।
তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশের জনগণ এবং সরকারের মধ্যে ঐক্য আরও শক্তিশালী হয়েছে।
ভারতের গণমাধ্যমে নেতিবাচক প্রচারণা
ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম বাংলাদেশকে নিয়ে ভুয়া তথ্য প্রচার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি সংখ্যালঘু নির্যাতন ইস্যুতে ভারতের মিডিয়ায় নানা ধরনের মনগড়া খবর প্রকাশিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর এই প্রচারণার পরিমাণ আরও বেড়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের দাবি, এসব খবর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
বিএনপির নেতা আমির খসরু বলেছেন, ভারতীয় মিডিয়ার অপপ্রচার বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করছে।
আওয়ামী লীগ বলছে, ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব নষ্ট করার পেছনে এসব অপপ্রচার বড় ভূমিকা রাখছে।
জামায়াতে ইসলামীর মতে, ভারতের মিডিয়ার এই ভূমিকা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল।
সংখ্যালঘু নির্যাতনের ভিত্তিহীন খবর ছড়িয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ানো হচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ভারতের মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নেতিবাচক ভূমিকা দুই দেশের স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
সংখ্যালঘু ইস্যুতে উত্তেজনা
ভারতের রাজনীতিবিদ ও মিডিয়ার বক্তব্যে সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অভিযোগ তুলেছে।
তারা দাবি করেছে, হিন্দু ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়ি, ব্যবসা, ও মন্দিরে আক্রমণ চালানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন এবং প্রোপাগান্ডা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জটিল হয়েছে।
ত্রিপুরায় সহকারী হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় সংখ্যালঘু ইস্যুতে আরও উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ভারতের মন্তব্য অযৌক্তিক।
জামায়াতে ইসলামী মনে করে, সংখ্যালঘু ইস্যুতে ভারত ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ বলছে, সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় বাংলাদেশ সবসময় সজাগ থেকেছে।
আওয়ামী লীগের নেতা খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, শেখ হাসিনার আমলে সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষিত ছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সংখ্যালঘু ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়ে উঠছে।
রাজনৈতিক বক্তব্যে বিভাজন
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো এই উত্তেজনা নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করছে।
বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা উচিত।
তিনি মনে করেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উন্নয়নে কূটনৈতিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করা উচিত।
অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী মনে করে, ভারতের ভূমিকা বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব বাড়িয়ে তুলছে।
জামায়াতের নেতা মতিউর রহমান আকন্দ বলেছেন, ভারতের উচিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা।
আওয়ামী লীগ মনে করছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক মজবুত ছিল।
তারা দাবি করে, বর্তমান সরকার পতনের পর সম্পর্কের অবনতি হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভারতবিরোধী অবস্থান দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
সামাজিক ও কূটনৈতিক প্রভাব
ভারতের গণমাধ্যম এবং রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য বাংলাদেশে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে অপপ্রচার বাড়ছে।
এই অপপ্রচার দুই দেশের জনগণের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করছে।
রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা না থাকলে এই পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।
ত্রিপুরায় হামলার ঘটনার পর থেকে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, দুই দেশের কূটনৈতিক এবং সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।