জাতীয় সংস
,

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন: সময় ও সংস্কার নিয়ে ধোঁয়াশা

বাংলাদেশে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা অব্যাহত।

সরকারের পক্ষ থেকে এখনও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা আসেনি।

তবে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা বিভিন্ন সময়ে আগামী বছরের নির্বাচনের আভাস দিয়েছেন।

শিক্ষা ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এক সম্মেলনে বলেন, “আমরা আগামী বছরেই একটি রাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত সরকার দেখব।”

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করা হবে।

তিনি জানান, “নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা শুরু করেছে, তবে এটি কখন গন্তব্যে পৌঁছাবে তা রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ওপর নির্ভর করছে।”

নির্বাচনের ট্রেন যাত্রার মন্তব্যটিকে বিশেষজ্ঞরা সংস্কারের অগ্রগতি বোঝাতে ব্যবহৃত রূপক হিসেবে দেখছেন।

সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম ও সুপারিশ

নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তী সরকার ১০টি খাতে সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।

নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, পুলিশ ও প্রশাসন সংস্কারে আলাদা কমিশন গঠন করা হয়েছে।

এগুলো বেশিরভাগ চলতি ডিসেম্বরের মধ্যেই সুপারিশ জমা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই সুপারিশ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছে।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, “আমরা অতি প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কার শেষ করে দ্রুত নির্বাচন দিতে চাই।”

তিনি আরও বলেন, “আগের মতো ভুয়া নির্বাচন ঠেকানো এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”

রাজনৈতিক দলের অবস্থান ও দাবি

বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে।

বিএনপির মতে, সঠিক সময়মতো নির্বাচন না হলে দেশের রাজনৈতিক সংকট দীর্ঘায়িত হবে।

জামায়াতে ইসলামী প্রথমদিকে নির্বাচন নিয়ে কোনো মন্তব্য না করলেও, দলটির আমির শফিকুর রহমান সম্প্রতি দ্রুত সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের কথা বলেছেন।

তিনি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে জানান, “ন্যূনতম সংস্কার সম্পন্ন করেই দ্রুত নির্বাচন দেওয়া উচিত।”

তবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা প্রধান উপদেষ্টার এখতিয়ার।

এদিকে সরকারের নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, “২০২৬ সালের মাঝামাঝি নির্বাচনের সম্ভাবনা রয়েছে।”

অন্যদিকে, সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, “পরবর্তী ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হতে পারে।”

নির্বাচনের প্রস্তুতি ও ভারত-সম্পর্ক

সরকার সম্প্রতি পাঁচ সদস্যের একটি নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে।

এর মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সদস্যদের নিয়োগের জন্য একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই উদ্যোগ নির্বাচনের প্রস্তুতির অগ্রগতির একটি ইঙ্গিত।

এদিকে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন পরিস্থিতি জটিল করেছে।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন।

বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ মনে করেন, “সঠিক সময়ে নির্বাচন দিতে হলে প্রশাসন ও পুলিশকে প্রস্তুত করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়বে।”

রাজনৈতিক ঐক্য ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

সরকারের পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান নির্বাচনের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

নির্বাচনের সময় নির্ধারণ মূলত সংস্কার কাজের অগ্রগতি ও রাজনৈতিক ঐকমত্যের ওপর নির্ভর করছে।

অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীন নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

তবে নির্বাচনের দিন-তারিখ ও প্রয়োজনীয় সংস্কার নিয়ে আলোচনা এখনো তীব্র।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক মহল সুনির্দিষ্ট ঘোষণা পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

আরও পড়তে পারেন