করোনাভাইরাসের প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়েছিল দেশের শিক্ষাব্যবস্থা।
চার কোটি শিক্ষার্থীর পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটে।
এরপর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে শিক্ষাক্ষেত্র বারবার বাধার মুখে পড়ে।
সর্বশেষ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের কারণে চার মাস বন্ধ ছিল সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরতে পারেনি শিক্ষাব্যবস্থা।
বারবার আন্দোলন ও দাবির কারণে সেশনজটের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়েছে, বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না।
শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ আরো তীব্রতর হচ্ছে, যা উচ্চশিক্ষার মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
শিক্ষাক্রমের ঘনঘন পরিবর্তনে দিশেহারা
স্বাধীনতার পর থেকে দেশের শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন এসেছে সাতবার।
সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন ঘটেছে গত দেড় দশকে।
২০২৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকার চালু করে অভিজ্ঞতানির্ভর মূল্যায়ন পদ্ধতি।
তবে শিক্ষকদের অপ্রস্তুত অবস্থায় এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।
সেপ্টেম্বরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে।
ফলে শত কোটি টাকা অপচয় হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমে অভ্যস্ত হতে না পেরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
শিক্ষাবিদরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া শিক্ষাক্রম পরিবর্তন শিক্ষাক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
শিক্ষা সংস্কারের দাবি উপেক্ষিত
অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হলেও শিক্ষা সংস্কারের জন্য কোনো কমিশন গঠিত হয়নি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় কমিটিও বাতিল করা হয়েছে।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরা বলছেন, শিক্ষা কমিশন গঠন না হওয়া দুঃখজনক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান খান মনে করেন, শিক্ষকদের অবমূল্যায়ন হলে শিক্ষা খাতের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
বিএনপি সরকারের সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন একটি স্থায়ী শিক্ষা কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে শিক্ষাক্ষেত্র ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় বিভ্রান্তি
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়ে বিভক্তি দেখা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে নিজস্ব কাঠামোতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে চায়।
তবে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ গুচ্ছ পদ্ধতি চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন।
তিনি বলেন, এখন এ পদ্ধতি থেকে সরে আসলে শিক্ষার শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সংকট ও শিক্ষার্থীদের হতাশা
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নতুন করে উত্তপ্ত করেছে শিক্ষাঙ্গন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক অদক্ষতার অভিযোগ এনে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ভাঙচুর ও সহিংসতা শিক্ষার পরিবেশকে আরও বিপন্ন করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামাল চৌধুরী বলেছেন, আন্দোলনের সহিংস স্মৃতি শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলছে।
প্রধান উপদেষ্টার শিক্ষাখাতে সংস্কারের প্রতিশ্রুতি
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি শিক্ষাক্ষেত্রের বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে তরুণদের দক্ষ করে তোলার পরিকল্পনা করার কথা বলেছেন।
প্রধান উপদেষ্টা মন্তব্য করেন, পূর্ববর্তী সরকারগুলো শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের চেষ্টা করেছে।
এটি সঠিকভাবে সংস্কার না করলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে।