আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ঢাকার যানজট নিরসন এবং গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রায় তিন লাখ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও বাস ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফেরানো যায়নি।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটির দুই মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এবং আতিকুল ইসলাম শৃঙ্খলা আনতে ব্যর্থ হন।
২০১৫ সালে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক বাস রুট র্যাশনালাইজেশনের উদ্যোগ নেন। কিন্তু তার মৃত্যু এবং পরবর্তী প্রশাসনের অগ্রগতির অভাবে এ প্রকল্প থমকে যায়।
ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নতুন করে শৃঙ্খলা আনার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় তৎপরতা এখনও অনুপস্থিত।
পরিকল্পনা কী ছিল এবং কেন ব্যর্থ হলো
বাস রুট র্যাশনালাইজেশন প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল সব বাসকে নির্দিষ্ট কোম্পানির অধীনে আনা।
প্রতিটি কোম্পানির অধীন থাকা বাস নির্দিষ্ট রঙের হবে এবং সময়সূচি মেনে চলবে।
পরিকল্পনায় ছিল পুরনো বাস তুলে দিয়ে নতুন বাস নামানোর। এজন্য পরিবহনমালিকদের সহজ শর্তে দুই হাজার কোটি টাকার ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।
২০১৮ সালের পর থেকে প্রশাসনের মনোযোগ মেগা প্রকল্পে কেন্দ্রীভূত হওয়ায় এ উদ্যোগটি থেমে যায়।
বিশ্লেষকরা বলেন, মেগা প্রকল্পগুলো থেকে আর্থিক সুবিধা পাওয়ার সুযোগ থাকায় এ প্রকল্পকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
চাঁদাবাজি এবং রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ
বাস রুট র্যাশনালাইজেশন প্রকল্পে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের বিরোধিতাও একটি বড় কারণ।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস থেকে বছরে ১,০৫৯ কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়।
চাঁদার ভাগ পান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, পুলিশ, এবং সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিরা।
দেশের ৯২ শতাংশ বড় বাস কোম্পানির পরিচালনায় রাজনীতিবিদদের প্রভাব রয়েছে।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রণে পরিবর্তন হলেও শৃঙ্খলার উন্নতি হয়নি।
মেগা প্রকল্পের ছায়ায় বাসের শৃঙ্খলা
ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোর যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে ২০৩০ সালের মধ্যে ১৩০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়।
মেট্রোরেল প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকা।
এছাড়াও উড়ালসড়ক, বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পসহ অন্যান্য অবকাঠামোগত প্রকল্পের পেছনে খরচ হয় প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও ঢাকার ২০ শতাংশ মানুষের যাতায়াত চাহিদা পূরণ হবে।
বাসের শৃঙ্খলা ছাড়া কোনো মেগা প্রকল্পই টেকসই ফল আনতে পারবে না।
বাসের শৃঙ্খলা কতটা জরুরি
ঢাকা শহরে গণপরিবহনের ৭২ শতাংশ ট্রিপ বাস-মিনিবাসে হয়।
এ শহরের বাসগুলো বেশিরভাগই জরাজীর্ণ এবং পরিষেবার মান অত্যন্ত নিম্নমানের।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাস ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে দক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং শক্তিশালী তদারকি প্রয়োজন।
বুয়েটের অধ্যাপক সামছুল হকের মতে, বাস ব্যবস্থার শৃঙ্খলা নিশ্চিত না হলে যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্পই অকার্যকর থাকবে।
ডিটিসিএর মতে, নতুন বাস নামানো এবং পুরনো বাস সরানোর মাধ্যমে ব্যবস্থা ঢেলে সাজালে রাজধানীর যানজট কমানো সম্ভব।