,

বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা বন্ধের বিতর্কে দ্বিধাবিভক্ত ভারত

পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরার কয়েকটি হাসপাতাল এবং চিকিৎসক বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

কলকাতার জে এন রায় হাসপাতালের পরিচালক শুভ্রাংশু ভক্ত বলেছেন, “দেশ সবার ওপরে। চিকিৎসা মহৎ পেশা হলেও দেশের সম্মান তার চেয়ে বড়।”

ত্রিপুরার আইএলএস হাসপাতালও হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের দাবির মুখে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে।

এই অবস্থানকে সমর্থন করেছেন কলকাতা ও শিলিগুড়ির কয়েকজন চিকিৎসক।

তারা সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে “ভারত-বিরোধিতা”র প্রেক্ষাপটেই তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

হাসপাতাল পরিচালকদের এই পদক্ষেপে রাজনৈতিক প্রভাবের অভিযোগ উঠেছে।

কলকাতার জে এন রায় হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বিজেপি নেতা সজল ঘোষ।

তিনি বলেছেন, “অন্যান্য হাসপাতালও একই পথ অনুসরণ করবে বলে আমরা আশা করছি।”

বাংলাদেশি রোগীদের প্রবাহে বড় ধাক্কা

অগাস্ট মাস থেকে বাংলাদেশি রোগীদের ভারতে আসা প্রায় ৭০% কমে গেছে।

পূর্ব ভারতের হাসপাতালগুলির সংগঠনের মতে, চিকিৎসা খাতে এটি বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে।

গত বছর প্রায় সাড়ে চার লাখ বাংলাদেশি ভারতে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন।

বাংলাদেশি রোগীদের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় কলকাতা, শিলিগুড়ি, এবং ত্রিপুরার অনেক হাসপাতাল বিপাকে পড়েছে।

মনিপাল হাসপাতালের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান ডা. অয়নাভ দেবগুপ্ত বলেন, “এটি আমাদের বহির্বিভাগ এবং রোগী ভর্তি পরিষেবায় প্রভাব ফেলেছে।”

তিনি জানান, পুরনো রোগীদের চিকিৎসা টেলি-মেডিসিন ও অনলাইন কনসাল্টেশনের মাধ্যমে চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

চিকিৎসক ও সংগঠনের বিরোধিতা

বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা না করার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের অনেক চিকিৎসক।

ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর সঙ্গে যুক্ত ডা. মানস গুমটা বলেন, “একজন চিকিৎসক হিসেবে কোনো দেশের বা ধর্মের রোগী চিকিৎসা না করা অশোভন।”

তিনি বলেন, “অপরাধী হলেও রোগীর চিকিৎসা করা আমাদের শপথের অংশ।”

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠনও এই সিদ্ধান্তকে নৈতিকভাবে ভুল বলেছে।

তবে ডা. গুমটা মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত হয়তো মানসিক আঘাতের ফল।

হাসপাতাল শিল্পে সংকট

পূর্ব ভারতের হাসপাতালগুলির সংগঠনের মতে, চিকিৎসা পর্যটন থেকে ভারতের যে আয় হতো, তা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।

ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ হসপিটালসের প্রেসিডেন্ট রূপক বড়ুয়া বলেন, “রোগী জাত বা ধর্ম বিবেচনা করে চিকিৎসা বন্ধ করা যায় না।”

তার মতে, বাংলাদেশি রোগীদের অভাবে ভারতের হাসপাতাল শিল্পে ধাক্কা লেগেছে।

বাংলাদেশি রোগীদের প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের হাসপাতালগুলিও ক্ষতির মুখে পড়েছে।

এদিকে, রোগী ভিসার সংখ্যা অগাস্টের পর থেকে ২০-২৫ হাজার থেকে নেমে ৭০০-১,০০০-তে দাঁড়িয়েছে।

হাসপাতালগুলো আশা করছে, রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা মিটলে এই সংকট কেটে যাবে।

আরও পড়তে পারেন