নওগাঁর ব্যবসায়ী গোপাল আগরওয়ালা ও দীপা আগরওয়ালা ১১৫ কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ নেওয়ার পর বন্ধকি সম্পত্তি আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘকে (ইসকন) উইল করে ভারতে চলে গেছেন।
এই ঋণের সুদাসলসহ বকেয়ার পরিমাণ এখন ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
সাউথইস্ট ব্যাংকের নওগাঁ শাখায় তাঁদের প্রতিষ্ঠান জেএন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও শুভ ফিড প্রসেসিংয়ের নামে বন্ধক রাখা হয়েছিল জমি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) বিশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা জানান, বন্ধকি সম্পত্তি উইল করা সরাসরি আইনের লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, “এ ধরনের কাজের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সন্দেহজনক লেনদেন এবং অর্থ পাচারের অভিযোগ
ব্যবসায়ী দম্পতির বিরুদ্ধে ব্যাংক ঋণের অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে।
বিএফআইইউর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে তাঁদের বিভিন্ন হিসাবে সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সাউথইস্ট ব্যাংকের শ্যামলী শাখার ঋণপত্রের মাধ্যমে অর্থ পাচার হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
একটি ঋণপত্রে ৬ লাখ ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার পাঠানো হয় মুম্বাইয়ে, যদিও পণ্য সরবরাহকারীর ঠিকানা ছিল কলকাতা।
এছাড়া নওগাঁর মার্কেন্টাইল ব্যাংক শাখার হিসাবেও অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।
সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিদর্শক দল জানায়, সংশ্লিষ্ট ঋণপত্রের কোনো বিস্তারিত তথ্য তারা পাননি।
বন্ধকি সম্পত্তি এবং ব্যাংকিং জালিয়াতি
সাউথইস্ট ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সময় বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় ৪৩৪ শতাংশ জমি বন্ধক রাখা হয়।
এই জমির তাৎক্ষণিক বিক্রয়মূল্য ছিল ৪৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
কিন্তু বন্ধকি জমি ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই ইসকনের নামে উইল করে দেওয়া হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোজাহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, “বন্ধকি সম্পত্তি হস্তান্তরের জন্য ব্যাংকের লিখিত অনুমতি আবশ্যক। এটি সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের লঙ্ঘন।”
ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বন্ধকি সম্পত্তি থেকে ঋণ সমন্বয়ের অধিকার রাখে বলে জানান তিনি।
জেএন ইন্ডাস্ট্রিজের অস্বাভাবিক ঋণ কার্যক্রম
২০১২ সালে সাউথইস্ট ব্যাংকের নওগাঁ শাখায় জেএন ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের একটি হিসাব খোলা হয়।
পরবর্তী সময়ে এই হিসাবের মাধ্যমে বেশ কিছু মোটা অঙ্কের টাকা উত্তোলন করা হয়।
২০১৬ সালে ৭৫ কোটি টাকার ঋণ আবেদন করেন গোপাল আগরওয়ালা।
ওই বছরের জুলাই মাসে ৬০ কোটি টাকার ওভারড্রাফট এবং ১০ কোটি টাকার মেয়াদি ঋণ অনুমোদন করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ঋণের বিপরীতে জমা পড়া এবং উত্তোলিত অর্থের মধ্যে অনেক অস্বাভাবিকতা রয়েছে।
বিএফআইইউর তথ্য অনুযায়ী, সাউথইস্ট ব্যাংকের নওগাঁ শাখায় ২০১২ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ৪৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা জমা পড়ে এবং ৪৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়।
সাউথইস্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নিরবতা
ব্যাংকের নওগাঁ শাখার ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
তিনি জানান, ঋণের বিতরণ ও প্রশ্নবিদ্ধ লেনদেনে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুদ্দীন মো. সাদেক হোসাইনকেও একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে সাউথইস্ট ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় এবং নওগাঁ শাখার অসঙ্গতিপূর্ণ কার্যক্রমের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ৫০০ কোটি টাকার এই ঋণ এবং পাচারের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।