অতীতে বিতর্কিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের ভবিষ্যৎ এখন অন্ধকারে। এসব নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের তালিকা প্রস্তুত করেছে। এছাড়া সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) তালিকা তৈরির কাজ চলছে।
সরকারের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে তাদের বড় দায়িত্বে নিয়োগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
বিতর্কিত তিন নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্তদের তালিকা
প্রথমত, বিভাগীয় কমিশনারদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এতে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের বিতর্কিত জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা ২৪ জন কমিশনারের নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
২০১৪ সালের নির্বাচন পরিচালনায় দায়িত্বে থাকা বেশ কয়েকজন বিভাগীয় কমিশনার ইতোমধ্যে অবসরে গেছেন। তবে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা চার কমিশনার এখনও পদে রয়েছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তিনটি নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা ২০৮ জন জেলা প্রশাসকের নাম। এদের মধ্যে কিছু কর্মকর্তা ইতোমধ্যেই ওএসডি হয়েছেন বা বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
বিতর্কিত নির্বাচনের অভিযোগ
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন থেকে শুরু করে ২০১৮ সালের ‘রাতের ভোট’ নির্বাচন এবং ২০২৪ সালের ‘ডামি নির্বাচন’ নিয়ে রয়েছে ব্যাপক বিতর্ক।
২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপিসহ অধিকাংশ বিরোধী দল ভোট বর্জন করে। নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রগুলো ছিল ফাঁকা। তবুও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ৪০ শতাংশেরও বেশি ভোট পড়ার কথা জানানো হয়।
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনকে অনেকেই ‘রাতের ভোট’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, ভোটের আগের রাতেই ব্যালট বাক্সে সিল মেরে ভোট ভরে রাখা হয়েছিল।
বিভিন্ন তদন্তে জানা গেছে, এসব নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে।
২০২৪ সালের নির্বাচন বর্জন করলেও আওয়ামী লীগ নেতারাই নৌকার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। এমন নির্বাচনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সাধারণ মানুষ।
শাস্তির মুখে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা
সরকারের পক্ষ থেকে তালিকাভুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যেই বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনের অভিযোগে কয়েকজন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে যুক্ত কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতেও তাদের জন্য বড় দায়িত্বে আসার সুযোগ থাকছে না।
অবশ্য এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেসুর রহমান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আগের বিতর্কিত নির্বাচনের ফলাফল
২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয় ১২৫টি আসনে। নির্বাচনের দিন প্রায় ফাঁকা কেন্দ্রগুলোতে ৪০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ার কথা বলা হলেও ভোটারদের উপস্থিতি ছিল নগণ্য।
২০১৮ সালের নির্বাচন আরও বেশি বিতর্কিত। নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটে সিল মারার ঘটনায় বিতর্কিত হন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
২০২৪ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও আওয়ামী লীগ নেতারা জয়ী হন। এটি নিয়ে বিভিন্ন মহলে তীব্র সমালোচনা চলছে।
জনপ্রশাসনের কড়া নজরদারি
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এসব বিতর্কিত নির্বাচনের ইতিহাস পুনরায় মূল্যায়ন করছে। কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে এবং প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তালিকাভুক্ত কর্মকর্তাদের ভবিষ্যতে বড় দায়িত্ব থেকে বিরত রাখার পাশাপাশি এ সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঠানো হবে।
জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।