বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠে সক্রিয় থাকার পরিকল্পনা নিয়েছে। দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা এই দলটি সংগঠিত কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের কাছে পৌঁছানোর কৌশল নিয়েছে। দলীয় নেতারা বলছেন, রাষ্ট্র মেরামতের লক্ষ্য সামনে রেখে তৃণমূলে কাজ শুরু করেছে বিএনপি।
সংগঠন গোছানো ও নেতাকর্মীদের সতর্ক বার্তা
বিএনপি তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম আরও জোরদার করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, নেতাকর্মীদের সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দিয়ে জনমুখী কাজে ব্যস্ত রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
নেতাকর্মীদের সতর্ক বার্তা দিয়ে দলটি জানিয়েছে, কোনো ধরনের চাঁদাবাজি বা অপকর্ম বরদাশত করা হবে না। অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগে এরই মধ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। প্রশাসন বা চাঁদাবাজির মতো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যাতে তারা লিপ্ত না হন, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৃণমূলে
বিএনপি ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে দেশব্যাপী জনসচেতনতা কর্মসূচি শুরু করেছে। দলটি বলছে, জনগণের কাছে তাদের এই সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরা হচ্ছে, যা তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, “জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা আরও গভীর করতে আমরা এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য জনগণের সেবায় নিবেদিত একটি রাজনীতি গড়ে তোলা।”
ঢাকা বিভাগ থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি ২১ ডিসেম্বর শেষ হবে। এতে বিভাগীয় কর্মশালা আয়োজনের মাধ্যমে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত করা হচ্ছে।
প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহারের ঘোষণা
শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর বিএনপি জানায়, তারা প্রতিহিংসার রাজনীতি চায় না। বরং, নতুন ধারার রাজনীতি শুরু করতে চায়।
এই অবস্থান ধরে রাখতে সাংগঠনিক সফরের সময় মোটরসাইকেল বহর বা গাড়ি শোভাযাত্রা পরিহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা ও সারাদেশে রঙিন পোস্টার, ব্যানার ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়াল থেকে সেগুলো অপসারণ করা হচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে কৌশল
বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়েছে। তবে তারা বলছে, যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না হলে, সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগে রাজপথে কর্মসূচি দেওয়া হবে।
সেলিমা রহমান বলেন, “আমরা কোনো দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতে চাই না। অন্তর্বর্তী সরকার যাতে ব্যর্থ না হয়, সেজন্যও আমরা কাজ করছি।”
দলের নেতারা মনে করছেন, অনির্বাচিত সরকার দীর্ঘদিন থাকলে তা নতুন সংকট তৈরি করতে পারে। এই অবস্থান থেকে বিএনপি সংস্কার উদ্যোগকে সমর্থন দিলেও নির্বাচনী প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার বিরোধিতা করছে।
জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির কৌশল
বিএনপি বলছে, জনগণই তাদের প্রধান শক্তি। সেই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তারা আগামী নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে সক্রিয় থাকবে।
দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, “আমাদের লক্ষ্য জনগণের দাবি নিয়ে কাজ করা। সংগঠনের কর্মসূচি পরিচালনার মাধ্যমে আমরা জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলতে চাই।”
বিএনপির লক্ষ্য এখন সুনির্দিষ্ট: তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত জনগণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলা।
নতুন রাজনৈতিক পরিবেশ ও সাবধানতা
বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব রাজনৈতিক সংঘাত এড়াতে বিশেষ সতর্ক।
দলের সিদ্ধান্ত হলো, জামায়াতে ইসলামীসহ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বিরোধে জড়াবে না বিএনপি। একইসঙ্গে, সরকারের সংস্কার উদ্যোগের প্রতি সমর্থন জানিয়ে দেশের স্বার্থে কাজ করতে প্রস্তুত দলটি।
তবে, বিএনপি স্পষ্ট করেছে যে, সংস্কারের আড়ালে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে, তারা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রাজপথে সক্রিয় হবে।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
বিএনপি বলছে, তাদের সাংগঠনিক কর্মসূচি ও সংস্কার প্রস্তাবই দলকে ভবিষ্যতের জন্য শক্তিশালী করবে।
নেতারা মনে করছেন, জনগণের মধ্যে বিশ্বাস ফিরিয়ে এনে তারা নতুন ধারার রাজনীতির সূচনা করতে পারবেন।
জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির এই কর্মকৌশল কতটা সফল হবে, তা দেখার অপেক্ষায় দেশবাসী।