আন্দোলনকারী ছাত্র
,

দল গঠনের প্রক্রিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন সম্ভাবনার বার্তা নিয়ে এগোচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

তারা ইতোমধ্যে রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।

জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বাইরের বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে তরুণ নেতৃত্বকে সামনে আনাই তাদের লক্ষ্য।

ছাত্র আন্দোলন থেকে রাজনীতিতে

জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের রক্তাক্ত স্মৃতি আজও বাংলাদেশের রাজনীতিতে দাগ কেটে আছে।

এই আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা এখনো চলমান।

এই নেতারা সম্প্রতি দল গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যরা।

তারা মনে করেন, আন্দোলনের মাধ্যমে জন্ম নেয়া চেতনাকে ধরে রাখতে একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম জরুরি।

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, “আমরা সিভিল সোসাইটির প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছি।

তবে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ যারা রাজনীতিতে আগ্রহী, তারা আলাদাভাবে একটি দল গঠন করতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই তরুণ নেতৃত্বকে সংঘবদ্ধ রাখতে এবং দেশের মানুষকে নতুন রাজনৈতিক শক্তির বার্তা দিতে।”

অভ্যুত্থানের চেতনা ও নতুন দল

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা জানিয়েছেন, আন্দোলনকে সরাসরি রাজনৈতিক দলে রূপান্তর করার পরিকল্পনা নেই।

তিনি বলেন, “আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল, আন্দোলনকে রাজনৈতিক দলে রূপ দেব না।

তবে কেউ যদি আলাদাভাবে নির্বাচন করতে চায়, সেটা তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।”

জাতীয় নাগরিক কমিটি ইতোমধ্যে সারা দেশে থানা পর্যায়ে কমিটি গঠন শুরু করেছে।

এই কমিটিগুলোতে শহীদ পরিবার, সংখ্যালঘু, নারী ও কৃষক-শ্রমিক শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

কমিটির সদস্যদের বয়সসীমা ৫০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।

পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তিরা পরামর্শক কমিটির মাধ্যমে কাজ করবেন।

তরুণদের জন্য নতুন প্ল্যাটফর্ম

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, “আমরা মনে করি, নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক শক্তি তৈরি হওয়া জরুরি।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রতিযোগিতা বাড়াতে প্রধান দুটি দলের পাশাপাশি আরও দুইটি গুরুত্বপূর্ণ দল প্রয়োজন।

এটা প্লাস টু ফর্মুলার মতো।”

সারজিস আরও বলেন, “এখন সময় এসেছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শত্রু মনে করার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার।

রাজনীতি হবে মানুষের জন্য কাজ করার প্রতিযোগিতা।

নতুন দল গঠন সেই প্রয়োজনীয় প্রতিযোগিতার সুযোগ তৈরি করবে।”

নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন

জাতীয় নাগরিক কমিটির লক্ষ্য নতুন বাংলাদেশ গঠন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার।

লিয়াজোঁ কমিটির মাধ্যমে বিভিন্ন অংশীজনের সাথে সংলাপ করে তারা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কাজ শুরু করেছে।

৮ই সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতীয় নাগরিক কমিটির আত্মপ্রকাশ হয়।

মুখপাত্র সামান্তা শারমিন জানিয়েছেন, “আমরা রাষ্ট্র পুনর্গঠন এবং ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ চাই।

আমরা এমন এক রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে চাই, যারা অভ্যুত্থানের চেতনাকে লালন করবে।”

নির্বাচন ও নতুন নেতৃত্ব

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা জানিয়েছেন, নির্বাচন নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

তিনি বলেন, “আমরা অভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছি।

নাগরিক কমিটির সাথে কোনো আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নেই, তবে কোনো সিদ্ধান্ত হলে আমরা সেটা জানাব।”

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যরা মনে করেন, তরুণ নেতৃত্বের প্রতিনিধি হিসেবে নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হলে তা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।

তারা বলছেন, “মানুষ নতুন নেতৃত্ব ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চায়।

এই প্রত্যাশা পূরণে তরুণদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।”

নতুন দলের অপেক্ষায় বাংলাদেশ

নতুন রাজনৈতিক দল গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছেন ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

তারা দেশের প্রতিটি স্তরে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছেন।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচন এবং রাজনৈতিক উত্তরণের প্রক্রিয়ায় এই দল কীভাবে ভূমিকা রাখে, তা সময়ই বলে দেবে।

আরও পড়তে পারেন