,

২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় সর্বাধিক প্রাণহানি

২০২৪ সালে বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় সর্বাধিক প্রাণহানির রেকর্ড হয়েছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, বছরজুড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫ হাজার ৩৮০ জন।

এর আগে সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছিল ২০২১ সালে, যেখানে নিহতের সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৮৪ জন।

ভিন্ন তথ্য দিচ্ছে বেসরকারি সংস্থাগুলো

২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির বিষয়ে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা থেকে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ৭ হাজার ২৯৪ জনের।

অন্যদিকে যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে, প্রাণহানির সংখ্যা ৮ হাজার ৫৪৩ জন।

বিভিন্ন সংস্থার তথ্যের পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, এ বছরটি সড়ক দুর্ঘটনার দিক থেকে রেকর্ড বছর হিসেবে চিহ্নিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণেই সঠিক তথ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

তবে এই সংখ্যাগুলোর যেকোনোটিই দেশের সড়ক ব্যবস্থার জন্য বড় ধরনের সতর্ক সংকেত বহন করে।

আইন ও নীতিমালা বাস্তবায়নে দুর্বলতা

২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বেশ কিছু আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়।

তবে আইন প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে দুর্বলতার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।

সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর কিছু ধারা পরবর্তীতে সংশোধন করা হলেও এটি কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যায়নি।

অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী মনে করেন, সড়ক পরিবহন আইনে উল্লেখযোগ্য দুর্বলতা রয়েছে।

তিনি বলেন, “নতুন আইন প্রণয়ন কিংবা বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ ছাড়া সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানো সম্ভব নয়।”

সরকারি নীতিমালায় যানবাহনের গতিসীমা নির্ধারণ থাকলেও এর বাস্তবায়ন দেখা যায়নি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অতিরিক্ত গতি, অদক্ষ চালক, এবং ফিটনেসবিহীন যানবাহন দুর্ঘটনার মূল কারণ।

অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা

২০২৪ সালে গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।

সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার জন্য সরকারকে ব্যাপক প্রত্যাশার মুখোমুখি হতে হয়েছে।

তবে দায়িত্ব গ্রহণের পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, “সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আমাদের পদক্ষেপ সন্তোষজনক নয়।”

তিনি জানান, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে এবং বিশেষ প্রশিক্ষিত চালকদের জন্য আলাদা লাইসেন্সিং ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা চলছে।

বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় একটি প্রকল্পের আওতায় সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নয়নের কাজও চলছে।

তবে এখনো সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে কার্যকর ফলাফল পাওয়া যায়নি।

আর্থিক ক্ষতি ও সামাজিক প্রভাব

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২১ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা।

এটি দেশের মোট জিডিপির প্রায় ১.৫ শতাংশ।

সড়ক দুর্ঘটনার ফলে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি সামাজিক ও মানসিক প্রভাবও ব্যাপক।

দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের সদস্যরা চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়ছেন।

সেই সঙ্গে দুর্ঘটনায় আহতরা দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকারকে আরও কঠোর ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে।

পরিবহন খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে নতুন আইন, নীতিমালা এবং তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি বলে মনে করছেন তারা।

আরও পড়তে পারেন