বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী
, ,

হারানো আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা পুনর্গঠনে সক্রিয় হচ্ছে জামায়াতে ইসলাম

হাতছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরুদ্ধারে উদ্যোগী সাবেক নেতৃবৃন্

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মোড় এনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জামায়াতে ইসলাম আবারও আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি পুনর্গঠনের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।

বণিক বার্তার এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ইসলামী ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় সক্রিয় হয়েছেন জামায়াত নেতারা।

গত এক যুগে দলটি বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল, যা জামায়াতের আর্থিক ভিত্তির ওপর প্রভাব ফেলে।

নেতাদের বক্তব্য, শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় জামায়াতের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে দলটির অবস্থান দুর্বল করার চেষ্টা চালানো হয়েছিল।

বর্তমান রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে হারানো সেই প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরুদ্ধারে পদক্ষেপ নিচ্ছেন তারা।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল) জামায়াতে ইসলামীর আর্থিক শক্তির অন্যতম ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত ছিল।

১৯৮৩ সালে মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংকটির নিয়ন্ত্রণ চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের হাতে চলে যায় ২০১৬ সালে।

তবে বর্তমান রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে ব্যাংকটির ওপর এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণ তুলে নিয়েছে।

নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয়েছে মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে, যা ব্যাংকটির পরিচালনায় নতুন ধারার সূচনা করেছে।

শুধু আর্থিক খাত নয়, জামায়াত নেতারা শিক্ষা খাতেও ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিলেন।

ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) ও মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দলটির দ্বারা প্রভাবিত ছিল।

বিগত সরকার আমলে এসব প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন করা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিজেদের অবস্থান পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে জামায়াত।

জামায়াত নেতাদের মতে, ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে দলটির প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ‘দখল’ করে নিয়েছিল।

ফলে এসব প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিষ্ঠাতাদের কাছ থেকে সরে গিয়ে রাজনৈতিক প্রভাবাধীন ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

মীর কাসেম আলী ইসলামী ব্যাংক, ইবনে সিনা ট্রাস্ট, কেয়ারি গ্রুপ এবং দিগন্ত মিডিয়ার মতো প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

ইবনে সিনা ট্রাস্টের অধীনে স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালিত হয়, যার মধ্যে রয়েছে ইবনে সিনা হাসপাতাল, ফার্মাসিউটিক্যালস, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং মেডিকেল কলেজ।

২০১২ সালে মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর থেকে ইবনে সিনার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোয় জামায়াত নেতাদের উপস্থিতি সীমিত হয়ে যায়।

যদিও সম্প্রতি রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর দলটির নেতারা এই প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।

দিগন্ত মিডিয়া করপোরেশন লিমিটেডও জামায়াতের অন্যতম আর্থিক ও প্রচারণামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত।

২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলাম কর্মসূচির পর দিগন্ত টিভির সম্প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

বর্তমান সরকারের পতনের পর সম্প্রচার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় টেলিভিশনটি আবার সম্প্রচারে আসার সুযোগ পেয়েছে।

জামায়াতের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত দৈনিক সংগ্রামেরও একসময় মিডিয়াভুক্তি বাতিল করা হয়েছিল।

সরকার পরিবর্তনের পর পত্রিকাটি আবার মিডিয়াভুক্তি পেয়েছে, যা দলটির প্রচারণায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ এখন মনে করেন, তাদের প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠনের মাধ্যমে রাজনৈতিক শক্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা সম্ভব।

আর্থিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পুনর্গঠনে সফল হলে জামায়াতে ইসলাম বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনরায় প্রভাব বিস্তার করতে পারে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ফলে জামায়াতের হাতে পুনরুদ্ধারের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

তবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলটির এই উদ্যোগ কতটা টেকসই হবে, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন রয়ে গেছে।

আরও পড়তে পারেন