বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) নিশ্চিত করেছে, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব লেস্টার সিটির ফুটবলার হামজা চৌধুরী বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দলে খেলার আনুষ্ঠানিক অনুমতি পেয়েছেন।
১৯শে ডিসেম্বর বাফুফের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ফিফার প্লেয়ার্স স্ট্যাটাস কমিটি হামজার পক্ষে অনুমতি প্রদান করেছে।
এর ফলে হামজা এখন বাংলাদেশের হয়ে মাঠে নামার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
হামজা চৌধুরী চলতি বছরের জুনে বাংলাদেশের পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন এবং আগস্টে তার মা রাফিয়া চৌধুরী লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে সেই পাসপোর্ট গ্রহণ করেন।
পাসপোর্ট পাওয়ার পর শুরু হয় লেস্টার সিটি এবং ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ছাড়পত্র সংগ্রহের প্রক্রিয়া, যা শেষ হয় ফিফার চূড়ান্ত অনুমোদনের মাধ্যমে।
হামজা বলেছেন, “শেষ ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। এখন আমি বাংলাদেশের হয়ে মাঠে নামার জন্য মুখিয়ে আছি।”
সম্ভাব্য অভিষেক মার্চে ভারতের বিপক্ষে
বাফুফে জানিয়েছে, হামজা চৌধুরীর বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক মার্চ মাসে ভারতের বিপক্ষে এশিয়ান কোয়ালিফায়ার ম্যাচে হতে পারে।
তবে তার আগেই যদি কোনো প্রীতি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে সেই ম্যাচে হামজাকে খেলতে দেখা যেতে পারে।
এর আগে অনেকেই আশা করেছিলেন, নভেম্বরে মালদ্বীপের বিপক্ষে ম্যাচেই লাল-সবুজের জার্সিতে মাঠে নামবেন হামজা।
তবে ফিফার অনুমতি পেতে দেরি এবং চোটের কারণে তা সম্ভব হয়নি।
হামজার উপস্থিতি জাতীয় দলের মিডফিল্ড শক্তিশালী করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ ফুটবলে নতুন অধ্যায়ের সূচনা
হামজার বাংলাদেশের হয়ে খেলার অনুমতিকে দেশের ফুটবল ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে দেখছেন ক্রীড়াবিশ্লেষকরা।
সাবেক ফুটবলার রাশেদুল ইসলাম মনে করেন, “হামজা এমন মানের ফুটবলার, যাকে আমাদের ফুটবলে দেখা যায় না। তিনি মাঠে এবং মাঠের বাইরে একটি নতুন স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করবেন।”
তিনি আরও বলেন, “হামজা ড্রেসিংরুমের পরিবেশ বদলাতে পারবেন। পেশাদারিত্ব এবং আধুনিক ফুটবলের মান নিয়ে তিনি দলকে এগিয়ে নেবেন।”
ক্রীড়া লেখক আশফাক উল মুশফিক মনে করেন, “হামজার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের জন্য বড় শিক্ষা হবে। তার স্টারডম দেশের ফুটবলে নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।”
লেস্টার সিটির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে হামজার অনুমতি সংক্রান্ত পোস্টটি দ্রুতই ভাইরাল হয়ে যায়, যা ৫০ হাজারের বেশি শেয়ার হয়।
এটি হামজার জনপ্রিয়তা এবং বাংলাদেশের ফুটবলে তার সম্ভাব্য প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়।
হামজা চৌধুরী: একজন তারকার যাত্রা
হামজা চৌধুরী ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব লেস্টার সিটির হয়ে খেলা একজন মিডফিল্ডার।
তার মা রাফিয়া চৌধুরী বাংলাদেশি এবং বাবা গ্রানাডিয়ান।
হামজা ছোটবেলা থেকেই ফুটবলে আগ্রহী ছিলেন এবং লেস্টার সিটির যুব দলে খেলার মাধ্যমে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করেন।
২০১৭ সালে তিনি লেস্টার সিটির হয়ে ইএফএল কাপে প্রথমবার মাঠে নামেন।
হামজার মা রাফিয়া, যার পৈতৃক নিবাস হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার স্নানঘাট ইউনিয়নে।
ছোটবেলায় তিনি প্রায়ই বাংলাদেশে আসতেন এবং গ্রামীণ জীবনের অভিজ্ঞতা তার জীবনের অন্যতম প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।
হামজার মা রাফিয়া তার ফুটবল ক্যারিয়ার গড়ার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছেন।
নিজের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি নিয়ে হামজা সবসময় গর্বিত।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে যাওয়া আমাকে বিনয়ী করে তোলে। আমার শিকড়ের প্রতি আমি সবসময় শ্রদ্ধাশীল।”
হামজা তার ধর্মীয় বিশ্বাস এবং পারিবারিক মূল্যবোধকেও জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করেন।
জাতীয় দলে যোগ দিয়ে হামজা বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।