২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বৈরশাসনের ১৫ বছর পর ক্ষমতা ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
তার শাসনামলে দেশজুড়ে ব্যাপক দমনপীড়ন, নির্বাচনী কারচুপি, এবং বিরোধীদের কারাগারে পাঠানোর মতো অভিযোগ ওঠে।
হাসিনার সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিক্ষোভ দমনে গুলি চালানোর অভিযোগেও জড়িত ছিল।
তবে, দেশজুড়ে এই স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশ এখন একটি অন্তর্বর্তী সরকার দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।
শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত এই সরকারে ছাত্র, সেনাবাহিনী, ব্যবসায়ী এবং নাগরিক সমাজের সমর্থন রয়েছে।
দ্য ইকোনমিস্ট বলেছে, এই পরিবর্তনই বাংলাদেশকে ২০২৪ সালের বর্ষসেরা দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
দমনপীড়ন থেকে মুক্তি পেল বাংলাদেশ
প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্টের মতে, বাংলাদেশের উন্নতির মাপকাঠি হলো গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টায় একটি নতুন যুগের সূচনা।
সাময়িকীর প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার শাসনামলের বিভিন্ন বিতর্কিত দিক তুলে ধরা হয়েছে।
এতে উল্লেখ করা হয়, আওয়ামী লীগের অধীনে দেশে গণতন্ত্রের চর্চা প্রায় বিলুপ্তির পথে গিয়েছিল।
তবে ক্ষমতার পরিবর্তনের ফলে দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরে এসেছে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাও অর্জিত হয়েছে।
দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্থায়ী সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
এর মধ্যে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং ২০২৫ সালে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়গুলো রয়েছে।
সিরিয়া রানারআপ, মুক্তি পেল স্বৈরশাসন থেকে
বাংলাদেশের পর ২০২৪ সালের বর্ষসেরা দেশের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া।
গত ১৩ বছরের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ শেষে ৮ ডিসেম্বর বাশার আল-আসাদের পতন হয়েছে।
এই পতনের মধ্য দিয়ে আসাদ পরিবারকে সরিয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেছেন বিদ্রোহী ইসলামপন্থী যোদ্ধারা।
দ্য ইকোনমিস্টের মতে, আসাদের শাসনামলে ছয় লাখের মতো মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং দেশটি অর্থনৈতিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে।
আসাদের রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার ও ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে স্বৈরশাসনের অবসান এবং নতুন শাসনের সূচনা সিরীয়দের জন্য আশার আলো দেখিয়েছে।
সিরিয়ার এই পরিবর্তন রাশিয়া এবং ইরানের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বাংলাদেশ ও সিরিয়ার পাশাপাশি আরও তিন দেশ
বর্ষসেরা দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ও সিরিয়ার সঙ্গে স্থান পেয়েছে পোল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং আর্জেন্টিনা।
তবে উন্নতির মাত্রায় বাংলাদেশ সবার শীর্ষে অবস্থান করেছে।
দ্য ইকোনমিস্ট জানিয়েছে, একটি অত্যাচারী শাসককে হটিয়ে আরও উদার সরকার গঠনের পথে এগোনোর জন্য বাংলাদেশ বিশেষ স্বীকৃতি পেয়েছে।