বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে স্থানীয় নির্বাচনের আয়োজনকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
তাদের দাবি, অন্তর্বর্তী সরকারের ম্যান্ডেট শুধুমাত্র জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
বিএনপি মনে করে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দায়িত্ব নির্বাচিত সরকারের।
গত সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এই অবস্থান চূড়ান্ত হয়।
বৈঠকে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
নেতারা আলোচনায় বলেছেন, স্থানীয় নির্বাচনের পক্ষে যে দাবি উঠেছে তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
বিএনপি মনে করে, দ্রুত জাতীয় নির্বাচনই দেশের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে কার্যকর হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেছেন, ‘আমরা জাতীয় নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো বিষয় নিয়ে ভাবছি না।’
বিএনপি নেতারা আশঙ্কা করছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে স্থানীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।
স্থানীয় নির্বাচনের পক্ষে যুক্তি দিচ্ছে সংস্কার কমিশন
অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন স্থানীয় নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেছে।
তারা বলছে, তৃণমূলের মানুষের কাছে স্থানীয় নির্বাচনের দাবি বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।
সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ‘ঢাকার বাইরের মানুষ স্থানীয় নির্বাচনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।’
কমিশন মনে করছে, জনপ্রতিনিধিশূন্য স্থানীয় সরকার কাঠামোতে নাগরিক সেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।
কমিশন আরো বলছে, প্রশাসনের অধীনে স্থানীয় সরকারের কার্যক্রম জনগণের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ।
এ অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারকে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
সংস্কার কমিশন স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার পক্ষে মত দিয়েছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটি ও নতুন রাজনৈতিক শক্তির পরিকল্পনা
জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন স্থানীয় নির্বাচনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছে।
তারা মনে করছে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
কমিটির নেতারা সরকারের কাছে স্থানীয় প্রশাসক নিয়োগের প্রস্তাবও দিয়েছেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং ছাত্র আন্দোলনের লক্ষ্য নতুন রাজনৈতিক দল গঠন।
স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে তারা জনভিত্তি শক্তিশালী করতে চায়।
নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, ‘জনসেবা নিশ্চিত করতে স্থানীয় নির্বাচন এখনই জরুরি।’
তারা দাবি করছেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অভাবে জনগণের মৌলিক সেবা পেতে সমস্যা হচ্ছে।
বিএনপির প্রতিরোধ এবং আইনি বিতর্ক
বিএনপি বলছে, অতীতে কোনো অন্তর্বর্তী সরকার স্থানীয় নির্বাচন করেনি।
তারা উল্লেখ করেছে, স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনের আইন থাকলেও তা প্রাসঙ্গিক পরিস্থিতিতে প্রযোজ্য নয়।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মাহবুবুল হক বলেছেন, বিশেষ পরিস্থিতিতে নির্বাচন বিলম্ব হতে পারে।
বিএনপি আশঙ্কা করছে, স্থানীয় নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের পথে অন্তরায় হতে পারে।
অন্যদিকে, কয়েকটি পৌরসভার অপসারিত জনপ্রতিনিধিরা আদালতে রিট করেছেন।
আদালত এই বিষয়ে রুল জারি করে সরকারকে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করার নির্দেশ দিয়েছে।
বিএনপি মনে করছে, স্থানীয় নির্বাচন আয়োজন করলে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়তে পারে।
তারা এই প্রক্রিয়াকে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নতুন ইস্যু তৈরির সুযোগ হিসেবে দেখছে।
অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং ভোটারের প্রত্যাশা
জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দল স্থানীয় নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
তাদের মতে, স্থানীয় নির্বাচনে সাফল্য জাতীয় নির্বাচনে মনোবল বৃদ্ধি করতে পারে।
স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের মতে, তৃণমূল মানুষের প্রত্যাশা পূরণে স্থানীয় নির্বাচন এখনই প্রয়োজন।
তবে বিএনপি এই দাবিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে এবং জাতীয় নির্বাচনকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা বলছে।