সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া ও স্থাপনা নির্মাণ নিয়ে উত্তেজনার মধ্য দিয়ে সম্পর্কের নতুন ধাপ পার করছে বাংলাদেশ-ভারত।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ভাঙন সীমান্ত পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলেছে।
সীমান্তে উত্তেজনা ঠেকাতে বিজিবি পরিখা খননের পাশাপাশি সীমান্তবাসীর সহায়তা পেয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে উত্তেজনা
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তে বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করতে গেলে তিন দিন ধরে উত্তেজনা দেখা দেয়।
বিজিবি পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করলেও মঙ্গলবার ও বুধবার আবারও নির্মাণকাজ শুরু করে বিএসএফ।
বিজিবি বাধা দিলে সীমান্তের দুই পাশে জওয়ানদের অতিরিক্ত মোতায়েন করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা দেশীয় অস্ত্র ও লাঠি নিয়ে বিজিবির পাশে অবস্থান নেয়।
পরে সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠকের মাধ্যমে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।
বিজিবি-রাজশাহীর সেক্টর কমান্ডার কর্নেল ইমরান ইবনে রউফ জানান, ১৫০ গজের ভেতরে নির্মাণকাজ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল।
লালমনিরহাট সীমান্তে লাইটপোস্ট নির্মাণের চেষ্টা
লালমনিরহাটের ধবলসূতী সীমান্তে বিএসএফ শূন্যরেখায় লাইটপোস্ট স্থাপনের চেষ্টা চালালে বিজিবির প্রতিবাদে তা বন্ধ হয়।
তিস্তা-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ মুহাম্মদ মুসাহিদ মাসুম নিশ্চিত করেন যে, মঙ্গলবার বিকেলে এই ঘটনা ঘটে।
এর আগে দহগ্রাম ইউনিয়নের সরকারপাড়া সীমান্তে একই ধরনের ঘটনার পর বিএসএফ বাধা পেয়ে পিছু হটে।
বিজিবি জানায়, এসব কার্যক্রম সীমান্ত আইন লঙ্ঘন এবং উত্তেজনার সৃষ্টি করছে।
সুনামগঞ্জ সীমান্তে গুলিতে নিহত বাংলাদেশি
সুনামগঞ্জ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে সাইদুল ইসলাম নামে এক বাংলাদেশি নিহত হন।
বিজিবি জানায়, সাইদুল ভারতীয় সীমান্তে সুপারি আনতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন।
বিজিবি-২৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক জানান, ঘটনাটি ভারতীয় ভূখণ্ডের ২০ গজ ভেতরে ঘটেছে।
শেখ হাসিনা সরকারের সময় সীমান্ত হত্যার ঘটনা বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা কার্যকর হয়নি।
আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াচ্ছে বিএসএফ
সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আধুনিক প্রযুক্তির ওপর জোর দিচ্ছে বিএসএফ।
বাহিনীর দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি নীলোৎপল কুমার পাণ্ডে জানান, নাইট ভিশন ক্যামেরা, সেন্সর এবং প্যান-টিল্ট-জুম ক্যামেরার মাধ্যমে সীমান্ত নজরদারি চালানো হচ্ছে।
কন্ট্রোল রুম থেকে সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।
বিএসএফ দাবি করছে, এসব প্রযুক্তি ব্যবহারে সীমান্ত নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় এই কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কূটনৈতিকভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
জনগণের সহায়তায় বিজিবির সক্রিয়তা
সীমান্তে উত্তেজনার মধ্যে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠি নিয়ে বিজিবির পাশে দাঁড়ায় সীমান্তবাসী।
অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিজিবিকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, সীমান্তে কোনো অবস্থাতেই আপস করা যাবে না।
সীমান্ত পরিস্থিতি ঠান্ডা রাখতে বিজিবি এবং জনগণের এই সংহতি নতুন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে।