,

সীমান্তে দুর্নীতির দায়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, নতুন ঢল আসার শঙ্কা নাকচ করল বাংলাদেশ

বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়ে দুর্নীতির অভিযোগ স্বীকার করলেও রাখাইন থেকে নতুন করে রোহিঙ্গা ঢল আসার আশঙ্কা নাকচ করেছে সরকার।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এ নিয়ে রবিবার ঢাকায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।

অন্যদিকে, মিয়ানমারের পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, যেখানে আরাকান আর্মি ও থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স একের পর এক সামরিক জয় অর্জন করছে।

রাখাইনে বিদ্রোহীদের সামরিক জয় ও সীমান্ত পরিস্থিতি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সীমান্তে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি নিজেদের শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে।

এ গোষ্ঠীটি সম্প্রতি পশ্চিমাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড দখল করে রেখেছে।

তারা দাবি করছে, সীমান্তবর্তী আন শহরের পুরো নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে।

অন্যদিকে, পার্শ্ববর্তী চিন রাজ্যের কানপেটলেট শহর দখলে নেওয়ার বিষয়েও বিদ্রোহীরা সফল হয়েছে বলে জানা গেছে।

বিবিসি বার্মিজ বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কানপেটলেট শহর থেকে জান্তার সেনা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বিদ্রোহী গোষ্ঠী থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের অধীনস্থ আরাকান আর্মি এখন মিয়ানমারের সবচেয়ে শক্তিশালী বিদ্রোহী গোষ্ঠী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমারের সামরিক সরকার পশ্চিমাঞ্চলীয় সামরিক সদর দপ্তর হারানো এবং অন্যান্য অঞ্চলে পরাজয়ের জন্য এখনো পাল্টা পদক্ষেপ নেয়নি।

বিদ্রোহীদের শক্তি বৃদ্ধি রাখাইনে নতুন সংঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি করছে।

রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ: দুর্নীতির অভিযোগ এবং ঢলের সম্ভাবনা

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পেছনে সীমান্ত দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এনেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।

তিনি জানিয়েছেন, বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ৬০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা দেশে প্রবেশ করেছে।

তবে তিনি আরও বলেছেন, সীমান্ত দুর্নীতির কারণে এ ধরনের অনুপ্রবেশ ঠেকানো অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।

মি. হোসেন বলেন, “দুর্নীতির মাধ্যমে প্রচুর রোহিঙ্গা ঢুকে যাচ্ছে, তবে এটি একটি সীমান্ত দিয়ে ঘটছে না।”

তবে নতুন করে রোহিঙ্গা ঢল আসার সম্ভাবনা তিনি নাকচ করেছেন।

বিশ্লেষক মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) এমদাদুল ইসলাম বলেছেন, জান্তা বাহিনী আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ না নিলে নতুন ঢলের আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।

তিনি বলেন, “রাখাইনের পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হলে ব্যাপক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে।”

মিয়ানমারের জান্তা সরকারের কৌশল এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

২০২১ সালে মিয়ানমারে সামরিক সরকার ক্ষমতা দখলের পর বিদ্রোহীরা সশস্ত্র লড়াইয়ে নেমেছে।

থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের অধীনে থাকা আরাকান আর্মি মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীকে একাধিক জায়গায় চ্যালেঞ্জ করছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, জান্তা সরকার এ সংঘাতে কৌশলগতভাবে বিভাজন তৈরি করেছে।

রাখাইনে কিছু রোহিঙ্গাকে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে ব্যবহার করার অভিযোগও রয়েছে।

অন্যদিকে, জান্তার সামরিক সদর দপ্তর হারানোর পরও পাল্টা ব্যবস্থা না নেওয়া তাদের দুর্বলতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মিয়ানমারের এই পরিস্থিতি নিয়ে এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা, মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, চীন, ভারত, এবং লাওসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ মিয়ানমারকে সীমান্ত ও রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের পরামর্শ দিয়েছে।

রাখাইনের বিদ্রোহ এবং বাংলাদেশের অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়গুলো

মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ বাড়তে থাকায় বাংলাদেশ এই পরিস্থিতিকে নীতিগতভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনায় জানিয়েছে, নন-স্টেট অ্যাক্টরদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সীমান্ত পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগজনক।

তিনি বলেন, “মিয়ানমারকে নিজেদের বর্ডার এবং রাখাইনের সমস্যা সমাধানে কার্যকরী উদ্যোগ নিতে হবে।”

অন্যদিকে, বাংলাদেশের রোহিঙ্গা বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান জানিয়েছেন, আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও ভাবা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রাখাইনের পরিস্থিতি যদি আরও অবনতির দিকে যায়, তবে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কৌশলগত যোগাযোগ বাড়াতে হবে।

মিয়ানমারের সামরিক সরকার যদি আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়, তবে রোহিঙ্গা সংকট আরও তীব্র হতে পারে।

আরও পড়তে পারেন