সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি নতুন মোড় নিয়েছে।
আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে ইসরায়েলের কৌশলগত অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে।
গোলান মালভূমিতে নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধির পাশাপাশি ইরানকে কোণঠাসা করার সুযোগ পেয়েছে ইসরায়েল।
বিদ্রোহীদের জয় এবং আসাদের পতনের পটভূমি
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ প্রায় পাঁচ দশক ধরে ক্ষমতায় ছিলেন।
তবে সাম্প্রতিক বিদ্রোহ এবং ইরান-হেজবুল্লাহর দুর্বলতা আসাদের পতনকে ত্বরান্বিত করে।
২০২৩ সালে গাজায় হামাসের আক্রমণ লেবানন এবং সিরিয়ায় সংঘাত বাড়িয়ে দেয়।
হেজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হলে আঞ্চলিক শক্তি ভারসাম্যে পরিবর্তন ঘটে।
এরপর সিরিয়ার বিদ্রোহীরা দ্রুত আলেপ্পো দখল করে নেয়।
এই বিজয়ের মাত্র ১২ দিনের মাথায় ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন বাশার আল-আসাদ।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আসাদের পতনকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ঐতিহাসিক দিন’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তিনি ইরান-হেজবুল্লাহর ওপর ইসরায়েলের হামলাকে বিদ্রোহীদের সাফল্যের পেছনে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।
নেতানিয়াহুর মতে, আসাদের পতনে সিরিয়ার জনগণের মুক্তি এবং ইরানের সামরিক শক্তির ক্ষয় সাধন ঘটেছে।
ইরান-হেজবুল্লাহর দুর্বলতা: ইসরায়েলের লাভ
ইরান দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।
সিরিয়া ছিল ইরান এবং হেজবুল্লাহর জন্য গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ কেন্দ্র।
আসাদের সহযোগিতায় হেজবুল্লাহকে অস্ত্র সরবরাহ সহজ হয়েছিল।
তবে আসাদের পতনে হেজবুল্লাহর সরবরাহ লাইন কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
ইসরায়েল বারবার ইরানের সামরিক অবকাঠামোতে বিমান হামলা চালিয়েছে।
ইরানের অস্ত্রাগার এবং রাসায়নিক গবেষণা কেন্দ্র লক্ষ্যবস্তু ছিল ইসরায়েলের।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল ইরানের ‘প্রতিরোধ অক্ষ’ দুর্বল করেছে।
ইরান সমর্থিত ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরাও ইসরায়েলি হামলার শিকার হয়েছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক বায়েজিদ সরোয়ার মনে করেন, আসাদের পতনে ইরানের আঞ্চলিক আধিপত্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, গাজায় হামাসকে সহযোগিতা করাও এখন ইরানের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
গোলান মালভূমির নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি
গোলান মালভূমি সিরিয়া এবং ইসরায়েলের মধ্যে একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা।
১৯৬৭ সালে ইসরায়েল গোলান দখল করে এবং ১৯৮১ সালে এটি নিজেদের অংশ ঘোষণা করে।
যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গোলানকে ইসরায়েলের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।
তবে ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র গোলান মালভূমির ওপর ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণকে স্বীকৃতি দেয়।
সম্প্রতি আসাদের পতনের পর ইসরায়েল গোলানের বাফার জোনে সৈন্য প্রবেশ করিয়েছে।
ইসরায়েল দাবি করছে, গোলান থেকে সিরিয়ার সামরিক তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করা সহজ হবে।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. বায়েজিদ সরোয়ার মনে করেন, ইসরায়েলের এই তৎপরতা আরব দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে।
তিনি বলেন, এই প্রেক্ষাপটে ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়া ইসরায়েলের জন্য সুবিধাজনক হতে পারে।
ইসরায়েলের নতুন অবস্থান
সিরিয়ার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ইসরায়েল নিজেদের কৌশলগত অবস্থান মজবুত করছে।
গোলানে নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি, ইরানবিরোধী কার্যক্রম এবং হেজবুল্লাহর দুর্বলতা ইসরায়েলের সাফল্যের দিকে ইঙ্গিত করে।
মধ্যপ্রাচ্যের শক্তি ভারসাম্যে এই পরিবর্তন ইসরায়েলের জন্য উল্লেখযোগ্য কৌশলগত সুবিধা বয়ে এনেছে।