,

সামরিক উপদেষ্টা তারিক সিদ্দিকের বিরুদ্ধে এভিয়েশন খাত দখল ও দুর্নীতির অভিযোগ

বাংলাদেশে এভিয়েশন খাতের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে থাকা মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমেছে।

তিনি ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা।

গত ১৫ বছরে ভিন্নমত দমন, গুম, খুন, এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর নির্যাতনের নানা অভিযোগে তার নাম উঠে এসেছে।

বিশেষ করে এভিয়েশন খাতে, তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সাবেক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আলমগীর হোসেনের মাধ্যমে লুটপাট ও দখলবাজির অভিযোগ করেছেন অনেক ভুক্তভোগী।

এভালন এভিয়েশনের দখল: একটি পরিকল্পিত অভিযান

২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি, এভালন এভিয়েশনের ৪০ কোটি টাকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করে নেয়া হয়।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৮ নম্বর হ্যাঙ্গার গেটের জায়গা ইজারা নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছিল এভালন।

অল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫টি বিদেশি বিমানের মেইনটেন্যান্স সেবা দিত।

তবে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এম এ মান্নানের ছেলে মঞ্জুরুল করিম রনির মালিকানার এই প্রতিষ্ঠানটি তারিক সিদ্দিকের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।

এভালনের এডমিন অফিসার মাহমুদ হোসেন রাজু জানান, “৫০ থেকে ৬০ জন লোক এসে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে এভালন দখল করে নেয়।”

জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে হামলাকারীরা প্রতিষ্ঠানটি ভাঙচুর করে এবং কর্মীদের মারধর করে।

আলমগীর হোসেনের সংযোগ: এভালনের দখল ও ব্যবহার

এভালনের দখলের দুই ঘণ্টার মধ্যেই বিএস টেকনিক্যাল সার্ভিস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে দখলকৃত স্থানে ইজারা দেওয়া হয়।

এই প্রতিষ্ঠানটির মালিক তারিক সিদ্দিকের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আলমগীর হোসেন।

এভালনের কর্মীদের দাবি, তাদের মালামাল ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিএস টেকনিক্যাল কার্যক্রম শুরু করে।

এভালনের জেনারেল ম্যানেজার ওমর ফারুক বলেন, “তারা আমাদের কোনো মালামাল আনতে দেয়নি। আমাদের সম্পদের অনুমানিক মূল্য ছিল প্রায় ৪০ কোটি টাকা।”

উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য

দখলের পরে এভালনের ইজারা বাতিল করে একটি চিঠি পাঠায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।

এই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এভালনের কার্যক্রম নীতিমালা অনুযায়ী পরিচালিত হয়নি।

এভালন কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করলেও আদালতের স্থিতাবস্থা আদেশ মানা হয়নি।

এক ভুক্তভোগী কর্মকর্তা বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে নাশকতা মামলা দিয়ে হয়রানি চালানো হয়।”

এভিয়েশন খাতে এই ধরনের অনিয়ম ও দখলবাজি নিয়ে আলোকপাত করার জন্য উচ্চতর তদন্তের দাবি জানিয়েছে এভালনের কর্মকর্তারা।

ভুক্তভোগীদের নির্যাতনের বিবরণ

এভালনের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ ওমর ফারুক অভিযোগ করেন, ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ তার বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করেন।

তিনি বলেন, “আমার নামে ৭টি মামলা দেওয়া হয়েছে। অথচ আমি কখনো রাজনীতি করিনি।”

তাঁর পরিবার ১ কোটি ১১ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েও মামলা থেকে মুক্তি পায়নি।

ভুক্তভোগীরা জানান, তারিক সিদ্দিক এবং আলমগীর হোসেনের দখল বাণিজ্যের কারণে তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।

এ প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিক্রিয়া জানাতে তারিক সিদ্দিক ও আলমগীর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

আরও পড়তে পারেন