বাংলাদেশ ক্রিকেটের তারকা সাকিব আল হাসান একসময় আইসিসি অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে থাকতেন, যেন তাঁর নামের পাশে ১ নম্বরটি বরাদ্দ ছিল। কিন্তু সেই দিন এখন অতীত। আইসিসির সাম্প্রতিক ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে সাকিবের নাম নেই। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে হলে ফিরে যেতে হবে তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সাম্প্রতিক সময়ের দিকে।
সাকিব এখন কেবল টেস্ট অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ে আছেন। তবে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে তাঁর দীর্ঘদিনের আধিপত্য কেন মুছে গেল, তা নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। তাঁর অনুপস্থিতি শুধু ফর্মের কারণে নয়, রয়েছে আরও কিছু জটিলতা।
র্যাঙ্কিং কীভাবে কাজ করে?
আইসিসির র্যাঙ্কিং নির্ধারণ করা হয় একটি অ্যালগরিদমের ভিত্তিতে, যেখানে মানব হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই। একজন খেলোয়াড়ের পারফরম্যান্সের পর্যালোচনা করে র্যাঙ্কিং পয়েন্ট নির্ধারিত হয়।
খেলোয়াড়ের রান, উইকেট, ম্যাচের পরিস্থিতি এবং প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তা—সবকিছু বিবেচনায় নেওয়া হয়। র্যাঙ্কিং একজন খেলোয়াড়ের বর্তমান পারফরম্যান্সকে প্রতিফলিত করে। তাই কোনো খেলোয়াড় যদি দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে থাকেন বা অবসর নেন, তাহলে তাঁকে র্যাঙ্কিং তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়।
সাকিবের ক্ষেত্রে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিং থেকে তাঁর নাম বাদ পড়ার কারণ হলো দীর্ঘদিনের অনুপস্থিতি।
র্যাঙ্কিং থেকে বাদ পড়ার কারণ
আইসিসি র্যাঙ্কিং থেকে একজন খেলোয়াড়ের নাম মুছে যাওয়ার তিনটি বড় কারণ রয়েছে:
1. নিষেধাজ্ঞা বা বহিষ্কার: যেমন, ২০১৯ সালে জুয়াড়ির প্রস্তাব গোপন করার অপরাধে সাকিবকে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। সেই সময়ে র্যাঙ্কিং থেকে তাঁর নাম বাদ পড়ে।
2. অবসর গ্রহণ: সম্প্রতি সাকিব নিজেই বলেছেন, তিনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আর খেলবেন না। এর মানে, তিনি ২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে কার্যত অবসর নিয়েছেন। তাই এই সংস্করণের র্যাঙ্কিংয়ে তাঁর নাম আর নেই।
3. দীর্ঘদিনের অনুপস্থিতি: আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের জন্য খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স ৯ থেকে ১২ মাসের মধ্যে আপডেট থাকতে হয়। এক বছরের বেশি সময় কোনো খেলোয়াড় না খেললে তাঁকে র্যাঙ্কিং থেকে বাদ দেওয়া হয়।
সাকিব সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছেন ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এক বছর পেরিয়ে যাওয়ায় তাঁর নাম স্বাভাবিকভাবেই র্যাঙ্কিং থেকে বাদ পড়েছে।
অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ে সাকিবের রাজত্ব
সাকিব আল হাসানের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার দুই দশক পেরিয়েছে। এ সময় তিনি ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে বারবার শীর্ষে উঠে এসেছেন।
২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর ওয়ানডে অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ছিলেন সাকিব। এরপর ২০১৫, ২০১৬, এবং ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা চার বছর তিনি ১ নম্বর অলরাউন্ডার ছিলেন।
টি-টোয়েন্টিতেও সাকিবের আধিপত্য ছিল নজরকাড়া। ২০১৪, ২০১৫, ২০১৭ এবং ২০২২-২০২৩ সাল শেষ করেছিলেন ১ নম্বর অলরাউন্ডার হিসেবে।
ক্রিকেট ইতিহাসের একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে সাকিব টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি—তিন সংস্করণেই অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে উঠেছেন।
অবসর ও র্যাঙ্কিং থেকে বাদ পড়া
সাকিব অক্টোবরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুরে টেস্ট খেলে আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের কথা বলেছিলেন। যদিও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তবে তিনি স্পষ্টভাবেই বলেছেন, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আর দেখা যাবে না তাঁকে।
এই ঘোষণাই তাঁকে টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিং থেকে বাদ দিয়েছে। অন্যদিকে, ওয়ানডে ক্রিকেটে এখনও সাকিবের কোনো অবসর ঘোষণা আসেনি। বরং তিনি বলেছেন, ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলেই ওয়ানডে থেকে বিদায় নিতে চান।
তবে এক বছর ধরে কোনো ওয়ানডে না খেলার কারণে র্যাঙ্কিং থেকে তাঁর নাম বাদ পড়েছে।
ভবিষ্যতের প্রশ্ন
সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। তাঁর অনুপস্থিতি র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে বড় শূন্যতা তৈরি করেছে।
প্রশ্ন থেকে যায়, সাকিব কি আবার ওয়ানডেতে নিয়মিত হয়ে র্যাঙ্কিংয়ে ফিরবেন? নাকি তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সম্পূর্ণ অবসর নেওয়ার পথেই এগোচ্ছেন?
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এবং ক্রিকেটপ্রেমীরা এখনো আশাবাদী যে, সাকিবের মতো কিংবদন্তি খেলোয়াড় হয়তো ওয়ানডে বিশ্বকাপ কিংবা চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো বড় মঞ্চে নিজের সেরাটা দিয়ে বিদায় নেবেন।
সাকিবের র্যাঙ্কিং থেকে বাদ পড়া তাঁর দীর্ঘ ক্যারিয়ারের একটি নতুন অধ্যায়। তবে এই অধ্যায় কি তাঁর বিদায়ের ইঙ্গিত, নাকি নতুন চ্যালেঞ্জের সূচনা, সেটি সময়ই বলে দেবে।