,

সাইবার হয়রানির শিকার নারীদের আর্তনাদ: নিরাপত্তা কি অধরাই থাকবে?

বাংলাদেশে সাইবার হয়রানির শিকার হচ্ছেন অসংখ্য নারী।

একটি ঘটনা থেকে শুরু করে প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের হয়রানির অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়ছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, গত এক বছরে সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনে ৯,১৬৫ জন নারী প্রতিকার চেয়েছেন।

অপরাধের ধরন বিশ্লেষণ করে জানা যায়, ৪৫ শতাংশ অভিযোগই ছিল ডক্সিং-এর।

যেখানে নারীদের ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও বিনা অনুমতিতে প্রকাশ করা হয়।

এছাড়া ব্ল্যাকমেইলিং, সাইবার বুলিং, মোবাইল হ্যারাসমেন্ট এবং ফেইক আইডি চালানোর মতো অপরাধও উল্লেখযোগ্য।

বন্ধুত্ব থেকে প্রতারণা: বেড়ে চলেছে ব্ল্যাকমেইলিং

সম্প্রতি মধ্যবয়সী এক নারীর ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হয়েছে।

ফেসবুকে আশরাফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় হয়।

ছয় মাসের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ায় প্রেমে, তারপর নিয়মিত ভিডিও কলে কথা।

কিন্তু আশরাফুল একসময় অনৈতিক প্রস্তাব দেন।

স্ক্রিন রেকর্ডারের মাধ্যমে নারীর ব্যক্তিগত মুহূর্ত ধারণ করে তা ব্যবহার করেন ব্ল্যাকমেইলের হাতিয়ার হিসেবে।

এরপর হুমকি দিয়ে টাকা আদায় এবং আরও আপত্তিকর ছবি চাওয়া হয়।

ভুক্তভোগী অভিযোগ করার পর পুলিশ আশরাফুলকে গ্রেপ্তার করে।

ডক্সিং-এর শিকার নারী: ভয় আর মানসিক বিপর্যয়ের চক্রে

ডক্সিং-এর শিকার এক ভুক্তভোগী কণা তার অভিজ্ঞতার কথা জানালেন।

তার গোসলের ছবি গোপনে ধারণ করে একটি ফেইক আইডি থেকে পাঠানো হয়।

অপরাধী তাকে টাকা দেয়ার পাশাপাশি আরও আপত্তিকর ছবি পাঠানোর হুমকি দেয়।

কণা রাজি না হলে তার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়।

তিনি তার বাবাকে ঘটনাটি জানান এবং নিকটস্থ থানায় অভিযোগ করেন।

পুলিশ তদন্তে অপরাধীর পরিচয় নিশ্চিত করে কণার প্রতিবেশী রায়হানকে গ্রেপ্তার করে।

আইনি প্রতিকার ও সচেতনতার অভাব: নারীরা কেন অসহায়?

অপরাধীরা নারীদের ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে অর্থ বা আরও আপত্তিকর ছবি হাতিয়ে নেয়।

পুলিশ বলছে, ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার জন্য প্রোফাইল লক এবং দুই ধাপের অথেনটিকেশন প্রয়োজন।

তবে অনেক ব্যবহারকারী সচেতনতার অভাবে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক জানান,

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের আচরণবিধি মানা জরুরি।

নারীরা বিভিন্ন সময় সাইবার স্পেসে হয়রানির শিকার হন, যা তাদের সামাজিক জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা: কতটা কার্যকর সাইবার সাপোর্ট?

পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি ইনামুল হক সাগর জানিয়েছেন, সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনে অভিযোগকারীদের তথ্য যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

তবে সচেতনতার অভাবে অনেক নারী প্রতারকদের সঙ্গে আপস করতে বাধ্য হন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাইবার অপরাধ রোধে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।

নারীদের তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে তোলার পাশাপাশি আইনি সহায়তার বিষয়েও সচেতনতা তৈরি করা জরুরি।

আরও পড়তে পারেন