খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান
,

সরকারের অভিযোগ ‘রাজনীতিবিরোধী’ বলে অভিহিত করল বিএনপি

বিএনপি সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সাম্প্রতিক মন্তব্যকে ‘রাজনীতিবিরোধী’ আখ্যা দিয়েছে।

উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়াকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে চায়।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেই মন্তব্যকে অস্বীকার করে বলেছেন, বিএনপি বরং সরকারকে সহায়তা করছে।

তথ্য উপদেষ্টার মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক

বুধবার একটি বিদেশি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার প্রক্রিয়া ব্যাহত করার চেষ্টা করছে।

তিনি অভিযোগ করেন, দলগুলো সংস্কারের চেয়ে নির্বাচনে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে।

এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়।

তবে, পরে ওই বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করে জনসংযোগ কর্মকর্তা মুহম্মদ জসীম উদ্দিনকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

বিবিসি বাংলাকে জসীম উদ্দিন জানান, তিনি অসাবধানতাবশত ভুল তথ্য দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিলেন।

কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে নতুন কোনো বক্তব্য প্রকাশ করা হয়নি এবং নাহিদ ইসলাম মন্তব্যটি নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেননি।

মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, বৈঠকের কথা গণমাধ্যমের উদ্দেশে বলা হয়নি, এটি একান্ত বৈঠকের আলোচনা ছিল।

বিএনপির প্রতিক্রিয়া

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন।

তিনি বলেন, “এ ধরনের বক্তব্য রাজনীতিবিরোধী এবং অসঙ্গতিপূর্ণ।”

তার মতে, রাজনৈতিক দলগুলো সব সময় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তী সরকারকে সহায়তা করে আসছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “আমরা কাউকে ব্যর্থ প্রমাণ করার দিকে মনোযোগ দিইনি।”

তিনি আরও বলেন, “সরকারি সংস্কার কমিশনে আমাদের সুপারিশ জমা দিয়েছি এবং সহযোগিতা করছি।”

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “সরকারের সমালোচনা মানে সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করা নয়।”

তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এ ধরনের মন্তব্য করার পেছনে কী রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করছে?”

সংস্কার ও নির্বাচনের বিতর্ক

অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ খাতে সংস্কার কমিশন গঠন করেছে।

বিএনপিও এ বিষয়ে ছয়টি কমিটি গঠন করে নিজেদের প্রস্তাব তৈরি করেছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে সংবিধান, পুলিশ, প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সংস্কারে সুপারিশ জমা দেওয়া হয়েছে।

সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, “সংস্কার না করে নির্বাচন দিলে তার কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে।”

তবে তিনি আশা প্রকাশ করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জাতীয় ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব।

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মনে করেন, মতভেদ থাকা সত্ত্বেও আলোচনা প্রক্রিয়ায় জটিলতা সৃষ্টি হবে না।

তিনি বলেন, “সংস্কারের ক্ষেত্রে অভিন্ন বিষয়গুলোতে ঐকমত্য গড়ে তোলা সম্ভব।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতামত

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন বলেন, “সংস্কারও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ।”

তার মতে, বর্তমান সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি এবং বিরোধী দলের রাজনৈতিক অবস্থানের মধ্যে ফারাক স্পষ্ট।

তিনি বলেন, “বিরাজনীতিকরণ এবং দলীয় স্বার্থে সংস্কার এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা দৃশ্যমান হচ্ছে।”

অধ্যাপক নাসরীনের মতে, এ ধরনের বিবৃতি রাজনৈতিক বিভাজন আরও গভীর করতে পারে।

আরও পড়তে পারেন